পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

308 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড এম-কম পাস করা লোকেও অনেক কিছু শিখতে পারে। লেখাপড়ার ফল হিসেবে ছাপাখানার এখন বাড়বাড়ন্ত অবস্থা। পাঁচজন লোক নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, এখন পয়ত্রিশজন খাটছে। পত্রিকা বের করার ইচ্ছা ছিল, তাই মাসিক বেরিয়েছে- এবার বাসনা দৈনিকের। বন্ধুবান্ধবের ধারণা শহীদ তা পারবে। শহীদ সাহেব ভীষণ নিয়ম মেনে চলার পক্ষপাতী। সময়মত পাওনা দিয়ে দেওয়া এবং সময়মত কাজ আদায় করতেও ছাড়ে না। তার সঙ্গে ব্যবসা করতে এসে সবাই খুশী। শ্রমিকরাও। বড় ঝড় বড় গাছের উপর দিয়েই যায় প্রবলভাবে, কিন্তু মাঝে মাঝে এমন এক-একটা ঝড় আসে যা ঘাসকেও রেহাই দেয় না। মার্চ মাসে বাংলাদেশে সে ঝড় এসে গেল। দোসরা মার্চ থেকে সব কিছু বন্ধের সাথে শহীদ সাহেবের ছাপাখানাও গেল আচল হয়ে। সাত তারিখ থেকে শেখ সাহেবের ডাকে আন্দোলন শুরু হয়ে গেল কর্মীরা মাঝে মাঝে এসে ঘুরে যেতে লাগল, বেশীর ভাগই বাড়ি চলে যাবে ঠিক করে। দশ তারিখে শহীদ সাহেব সব কর্মীদের নিয়ে মিটিং-এ বসে যায়। বলে, আমরা এখানে কেন জমায়েত হয়েছি আপনারা জানেন। জানে, সবাই জানে, তাই সবাই চুপ৷ শহীদ সাহেব বলে চলে, দেখুন আমরা রাজনীতি করতে চাই বা না চাই, রাজনীতি আমাদের ছেড়ে কথা কইবে না। আজ দেশ যে পর্যায়ে গেছে সেখান থেকে আমাদের আর ফেরার উপায় নেই। এ ব্যাপারে আমাদেরও ত্যাগ স্বীকার করেত হবে। দেখুন, কাজ হোক আর না হোক মাইনে আমাকে গুণতেই হবে। তবে আপনারা আমাকে একটু সাহায্য করুন, এ মাসের পনের দিনের টাকা নিয়ে দেশে চলে যান, পরে আমি চিঠি দিয়ে ডেকে আনব, আর বাকী টাকা দু’মাসের মধ্যে কিস্তিতে শোধ করে দেব। প্রেসের আয় কত তাতো আপনারা সবাই জানেন। শ্রমিকরা প্রতিবাদ না করে এই ব্যবস্থা মেনে নেয়। ভরা বসন্ত তখন বাংলাদেশে। চৈত্র পবনে বাতাস উতলা। ঝুমকো লতার চাওয়ায় মনের বেদনা উদাস হয়ে দেখা দেয়। মুকুলগুলি ঝরে ঝরে পড়ে। এমন এক বসন্ত-রাতে অকস্মাৎ সেই ঝড়টা চূড়ান্ত রূপে এসে গেল। পচিশে মার্চের রাতে। নেকড়েগুলো ছাড়েনি। এক মাস কেটে গেছে ছাপাখানার কোন কর্মীর দেখা নেই। শহীদ সাহেব আর তালা খোলেন না। কি হবে খুলে? ব্যবসা, টাকা-পয়সার কথা চিন্তা হলেই বুকের কাছটা কেমন করে ওঠে তার, মাথা ঘুরে যায়। কয়েকদিন পর শহীদ সাহেব ছাপাখানা খোলেন, সরকারী চিঠি এসেছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব খুলে রাখার হুকুম। ধুলো ঝেড়ে চেয়ারে বসে কি যেন ভাবছেন এমন সময় প্রতিবেশী রসুল সাহেব উকি দেন। বলেন, কি ভাই, অফিস খুলেছেন, বহুত আচ্ছা। ভদ্রলোক অবাঙালী।