পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড
309

 খাতির করে ডেকে বসান শহীদ সাহেব।

 দু’চারটে কথা বলে রসুল সাহেব বেশ হৃষ্ট মনে চলে যান। আর শহীদ সাহেব গালে হাত দিয়ে ভাবেন এক মাস আগেও এই রসুল সাহেব যেতে-আসতে সালাম দিয়ে যেতেন, গায়ে পড়ে করতেন আলাপ, আর আজ? এই রসুল সাহেবের দয়ার উপরেই নির্ভর করছে এ পাড়ার লোকগুলোর জীবন-মরণ।

 প্রায় তিন মাস কেটে গেছে। ছাপাখানা তেমনি অচল। তবে প্রতিরোধের কাজ দিন দিন জোরদার হচ্ছে। শুধু বোমা নয়, ঢাকা শহরে রীতিমত সামনাসামনিও লড়াই হচ্ছে। চোরাগুপ্তি সংগঠনের সাথে সাইক্লোস্টাইলে ছাপা দুটো পত্রিকা চলছে, গোপনে একজনের হাত থেকে আর একজনের হাতে চলে যায়- লিফলেটহ্যাণ্ডবিলও বিলি চলছে।

 দু’দিন গভীর রাতে রসুল সাহেব লক্ষ্য করেন শহীদ সাহেবের ছাপাখানায় আলো- আর ট্রেডল মেশিনটাও চলছে। ভাবেন, এত রাতে কি কাজ। বলেন ত কোন কাজও নেই।

 রোজকার মত শহীদ সাহেব অফিস খুলে বসেন, ঝিরঝিরিয়ে নেমেছে বৃষ্টি, ভিজে বাতাসে ঘুম ঘুম ভাই। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকতে থাকতে কখন চোখের পাতা তার জড়িয়ে গেছে। এক সময় দেখতে পান তার অফিসটা কখন তিনতলা বাড়ি হয়ে গেছে, নীচতলায় চলতে অফসেট মেশিন, লাইনোটাইপে কম্পোজ হচ্ছে। তার দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক বাংলাদেশ’, কাগজের শেষ পাতায় নীচের দিকে কোণায় তার নাম লেখা, সম্পাদকঃ শহীদ আহমদ।

 এই সময় ভীষণ ঘরঘর শব্দে তার তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়। দেখে একটা মিলিটারী জিপ সাঁ করে বেরিয়ে গেল। ঘাড় কাৎ করে শহীধ সাহেব দেখেন জিপটা রসুল সাহেবের বাসার সামনে থেমে গেল। জিপ থেকে নামেন রসুল সাহেব, কি যেন বলেন, তারপর আঙ্গুল বাড়িয়ে এদিকেই কি দেখান।

 জিপটা মুখ না ফিরিয়ে ব্যাক করে ছাপাখানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। লাফ দিয়ে নামে সশস্ত্র দু’জন পশ্চিমা সেনা।

 একজন সেনা পরিষ্কার বাংলায় বলে, শহীদ আহমদ কার নাম?

 আমার নাম। কি দরকার বলুন। ভাবেন রসুল সাহেব হয়ত কোন সরকারী কাজ জোগাড় করে দিয়েছেন।

 কোন জবাব না দিয়ে সৈনিক বুক পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে শহীদ সাহেবের মুখের সামনে তুলে ধরে।

 একটা হ্যাণ্ডবিল বড় বড় হরফে লেখা- মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করুন। কিন্তু অত বড় অক্ষরগুলো কেমন চিনে উঠতে পারেন না শহীদ সাহেব, সব কেমন গুলিয়ে যেতে থাকে। তা অবশ্য মুহুর্তের জন্যে।

 পর মুহুর্তের শহীদ সাহেব সহজ গলায় বলেনঃ ও হ্যাণ্ডবিলটা তো, ওটা আমার প্রেসেই ছাপা হয়েছে।

(বুলবন ওসমান রচিত গল্প)