পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খণ্ড
13


জয় নিপীড়িত জনগণ জয়
জয় নব অভিযান
জয় নব উত্থান।’
জয় স্বাধীন বাংলা।

প্রচারঃ ২৮-৩-৭১

৩.


সাম্প্রদায়িকতাঃ সামন্তবাদ প্রসঙ্গ *

মোস্তফা আনোয়ার

 সামন্তবাদ সভ্যতার ইতিহাসে একটি মৃত অধ্যায়। বাংলাদেশেও একদিন ছিলো সামন্ততন্ত্র ছিলো জমিদারের শাসন ও শোষণ। এই জমিদারদের ছিল দুর্দান্ত প্রতাপ। পরগাছার মত এই জমিদার-শ্রেণী বেঁচে ছিল লাঞ্ছিত-নিপীড়িত মানুষের রক্ত শোষণ করে। এই জমিদাররা নিজেরাই এক জাতি-নিজেরাই একটা শ্রেণী। এরা হিন্দুও নয়, মুসলমানও নয়। এরা রক্তপায়ী এক জীব। এরা দরিদ্র মুসলমান কৃষককে শোষণ করেছে-নিরন্ন হিন্দু কৃষককেও ক্ষমা করেনি। এদের রক্তলোলুপ থাবা থেকে কেউ-ই রেহাই পায়নি। সম্পর্কটি ছিলো জমিদার ও কৃষকের মধ্যে শোষক ও শোষিতের সম্পর্ক- হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক নয়। হিন্দু জমিদারের মধ্যে যেটা কাজ করেছে সেটা শ্রেণীস্বর্থ-জমিদাররূপে অত্যাচারিত কৃষকের রক্ত-পানের উদগ্র নেশা।

 হিন্দু বা মুসলমান জমিদারদের অত্যাচারের এটাই বাস্তব চিত্র। শুধু বাংলাদেশে কেন সমগ্র বিশ্বে সামন্ততন্ত্রের এটাই আসল চেহারা। রাশিয়ায় বা আমেরিকায় এই সামন্ত প্রভুদের অত্যাচারের কাহিনী রক্তলেখায় লেখা আছে ইতহাসে ও সাহিত্যে।

 (বিশ্বের প্রতিটি দেশে সাধারণ মানুষ অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত হয়েছে এই জমিদার শোষকগোষ্ঠী দ্বারা। কিন্তু এই অমানিশারও শেষ আছে। মানুষের মুক্তির সূর্যোদয় অবশ্যম্ভাবী। অত্যাচারিত মানুষ জেগেছে। ঘুম ভেঙ্গেছে দৈত্যপুরীর রাজকন্যার। অবশেষে কবর রচিত হয়েছে সামন্ততন্ত্রের। অত্যাচার আর নিপীড়নের হয়েছে অবসান। শোষণহীণ গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করেছে সংগ্রামী মানুষ।)

 আমরা আগেই বলেছি, সামন্তবাদ বা জমিদারতন্ত্র সভ্যতার ইতিহাসে একটি মৃত অধ্যায়-যাদুঘরের সামগ্রী। যে জমিদার অত্যাচার করেছিলো, সে জমিদার শেষ হয়েছে। নিশ্চিহ্ন হয়েছে এই রক্তাপায়ী জোঁক শ্রেণী। ব্যাপারটি হচ্ছে শ্রেণী-সংঘর্ষের- হিন্দ-মুসলমানের নয়। বরং সর্বহারা কৃষকের জয় ঘোষিত হয়েছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পত্তনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের দরিদ্র কৃষকের দুঃখের অবসান হয়েছিল। বাংলার কৃষকের চোখে নেমেছিলো নতুন ফসলের আশা। বাংলার কৃষক দুর্ভিক্ষ দেখেছে। দেখেছে জলোচ্ছাসের ভীষণ তাণ্ডবলীলা, দেখেছে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণির বিধ্বংসকে। তবু সে বুক বেঁধে দাঁড়িয়েছে প্রতিবার। পদ্মাপারের মানুষ ধ্বংসকে ভয় করে না, তার হাতে আছে দুর্জয় সৃষ্টির মন্ত্র।

 কিন্তু এতবড় দুর্যোগ কি কেউ কোনোদিনও দেখেছে? নিজের দেশে, নিজের ঘামঝরানো পয়সায় কেনা গুলি এসে বিধে নিজেরই বুকে। কারা চালালো গুলি? হিন্দু জমিদার-নাকি সেই দস্য বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার?






-----------------------------------------------
চট্টগ্রাম সীমান্তবর্তী মুক্তাঞ্চলে দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থাপিত বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত