পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

503 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড সংযোজন - সূত্র - ২৩। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্ৰ | ‘বেতার বাংলা’ | ....... থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠানমালার মার্চ ও এপ্রিল, Ֆի, ԳՀ আরও কয়েকটি কথিকা। - ՏծԳՀ তথাকথিত পাকিস্তান বেতার ঢাকা ঢাকা বেতার কেন্দ্র এখন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। না, গ্যাস চেম্বার কিম্বা সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে বেতার কর্মচারীদের হত্যা করা হচ্ছে না। মিথ্যে প্রচারকে জিইয়ে রাখবার জন্য তাদের যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। এবং এই প্রয়োজনটুকু না থাকলে বেতারের সঙ্গে জড়িত সবাইকে মানবতার বর্বরতম শত্রু ইয়াহিয়া সরকার এতদিনে নিশ্চয়ই হত্যা করতো। তবু বলছি ঢাকর বেতার কেন্দ্র এখন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। সেখানে বিবেককে, সত্যকে, সাড়ে সাত কোটি বাংলার মানুষের বক্তব্যকে বেয়নেটের পাশবিক আক্রমণে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে। এর চেয়ে জঘন্যতম কনসেন্ট্রেশন আর কি হতে পারে? ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ-এর পর যদি কারো কারো বেতার কেন্দ্রে যাওয়ার দুর্ভাগ্য হ’ত তা হলে দেখতে পেতেন সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক সামী কোরায়শীর সেক্রেটারীয়েট টেবিলের উপর দ্বিতীয় আর একটি টেলিফোন শোভা পাচ্ছে। সাধারণ টেলিফোনের থেকে এর গড়ন সম্পূর্ণ অন্য ধরনের। এই টেলিফোন থেকে একটি মাত্র জায়গায় যোগাযোগ করা যায় এবং সে জায়গাটা হচ্ছে কসাইদের সুরক্ষিত ক্যান্টনমেন্ট। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন? কেন এই ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক টেলিফোন লিঙ্ক-এর এই আলাদা ব্যবস্থা? ঢাকার বেতারে আরও ৬ জন সিনিয়র সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক আছেন। কিন্তু কেনই বা বেছে সামী কোরায়শীর কক্ষে এই টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হল? যদিও তিনি অনেক জুনিয়র- এর একমাত্র উত্তর সামী কোরায়শী পশ্চিম পাকিস্তানী। অতএব, তিনি কসাই সরকারের একনিষ্ঠ পদলেহী। অবশ্য সামী কোরায়শী ছাড়াও ঢাকা বেতারে আরও এমন কয়েকজন দালাল রয়েছে যারা সামরিক স্বার্থের লালসায় বর্বরতার গ্যাংরিনে আক্রান্ত শত্রদের পদলেহন করছে। বাংলার মানুষের ন্যায়দণ্ড তাদেরকে কোনদিনই ক্ষমা করবে না। ক্ষমা করতে পারে না। এ থেকে আর একটি সত্য আগুনের মতো জুল জুল করে ওঠে। আর সেটা হচ্ছে কসাই সরকার বাঙালীদের কোনক্রমেই বিশ্বাস করতে পারছে না, বাংলার মুক্তিকামী মানুষদের নিয়ে তারা সর্বদাই সন্ত্রস্ত। অবশ্য এটা অত্যন্ত পুরোনো সত্য। কিন্তু আমার বক্তব্য হচ্ছে- এত অবিশ্বাস, এত সন্ত্রস্ততা, এত আতঙ্ক সত্ত্বেও বর্বর সরকার মিথ্যে প্রচারের প্রলেপ বুলিয়ে তাদের কুৎসিৎ মানসিকতাকে চাপা দেয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তাই রেডিও পাকিস্তানের খবরে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, অমুক জায়গায় জনসাধারণ কসাইদের ভাষায় দুষ্কৃতকারীদের ধরিয়ে দিয়েছে। একদিকে তারা প্রচার করছে শান্তি কমিটির কথা, অন্যদিকে প্রচার করছে দেশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তাই যদি হবে তাহলে শান্তি কমিটির প্রয়োজন পড়ল কেন? কেন নানা ধরনের মিথ্যে প্রচারণার বেসাতি? কেনই বা বার বার প্রচার করা হচ্ছে আপনারা সবাই কাজে যোগ দিন? এর উত্তর বাংলার মানুষ জানে। নতুন করে বলবার প্রয়োজন নেই। ১৯৭১-এর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বেতারের কয়েকজন কর্মীসহ আশরাফুল আলম শত্রকবলিত ঢাকা বেতার কেন্দ্র ছেড়ে মুজিবনগরের স্বাধীন বাংলা বেতারে যোগ দেন। এই কথিকাটি ১৯৭১-এর ৯ই জুন স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে প্রচারিত হয়েছিল- বেতার বাংলা, ১৯৭২]