পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

509 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড করেছি। এরা দাদীমার সেই আজগুবি জন্তুবেশী ভূত নয়। এরা মানুষ্যবেশী হিংস্র জন্তু নরঘাতক, ইবলিশ। বাংলার পবিত্র মাটি থেকে উৎখাত করে বিশ্বের দরবারে এই ইবলিশের মুখোশ আমরা ফাঁস করে দেবেই দিবো। (মেসবাহ আহমেদ রচিত) রণাঙ্গনের চিঠি যশোহরের রণাঙ্গনে ক্ষণিক বিরতির সময়ে জানতে পেলাম, গণতন্ত্রের পীঠস্থান মহান ভারত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। উল্লাসে ফেটে পড়েছে আমাদের সমস্ত শিবির। আনন্দে তোর সোনার অঙ্গ। ভাবিস আমরা তোর শৃঙ্খল ঘোচাবো, তোকে মুক্ত করবো, আবার তোকে সাজাবো জানো বন্ধু, কী তৃষ্ণা কী আকুলতা নিয়ে কেটেছে গত আট মাস বারো দিন এই একটি সংবাদের জন্য! কেটে গেছে কতো বিনিদ্র রজনী। যখন রণক্ষেত্র থেকে আহত স্বামীকে কোলে করে নিয়ে ফিরেছি, তখন পড়ে কয়েক দিন আগে শেষ নিঃশ্বাস ফেলবার আগের মুহুর্তে আশরাফ ফিস ফিস করে জিজ্ঞাসা করেছিলো “স্বীকৃতি মিলেছে? উত্তর দেবার আগেই আশরাফ শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছে। আমার বুকে আমার হাতে তখনও আশরাফের ছোপ ছোপ রক্ত। রক্ত কথা বলে উঠলো, “আমি আশরাফের রক্ত স্বীকৃতির দাবী নিয়ে বাংলার মাটিতে জমাট বেঁধে থাকবো, তোমরা আমাকে স্বীকৃতি দাও। তোমরা আমাকে স্বীকৃতি দাও।” আজ স্বীকৃতি মিলেছে। আমার বুকপকেটে রয়েছে আশরাফের রক্তমাখা আমার রুমালটি। বার বার রুমালটি দু'চোখে চেপে ধরছি। আমাদের বন্ধু আশরাফের রক্ত-শোন, তুমি শোন, স্বীকৃতি মিলেছে তোমার। রক্তের। স্বীকৃতি মিলেছে দশ লক্ষ লোকের রক্তের, যারা বর্বর খুনী ইয়াহিয়ার বাহিনীর গুলির আঘাতে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, স্বীকৃতি মিলেছে বাংলার সাতে সাত কোটি মানুষের। বন্ধু, আনন্দে আমার চোখের জল ঝরছে। আশরাফের পবিত্র রক্তের সংগে আমার চোখের জল মিলে একাকার হয়ে গেছে। তুমিও কী কাঁদছো বন্ধু? কেঁদো না। দোহাই তোমার, কেঁদোনা, চোখের জল মুছে ফেলো। বাংলাদেশে পাকিস্তানী সরকারের বিমান বাহিনী বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ৪৭টি পাকিস্তানী জংগী বিমান ভূপাতিত তাদের দুটি যুদ্ধজাহাজ, একটি ডেষ্ট্রয়ার, ১টি সাবমেরিন নিমজ্জিত। তাদের একটির পর একটি শত্রসেনা সম্পূর্ণ বিতাড়িত। সমগ্র টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলা সম্পূর্ণরূপে শত্রমুক্ত হয়েছে। অন্যান্য জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উড্ডীয়মান বাংলাদেশের জয় পতাকা। সুতরাং, বন্ধু কেঁদো না। চোখের কোণে তোমার আনন্দের, বেদনার যে জলটুকু জমে উঠেছে তা মুছে ফেলো। আমরা এগিয়ে চলেছি, তোমরাও এগিয়ে চলো দুর্বার গতিতে। শত্রর দুর্গে আঘাতের পর আঘাত।