পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

51 | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড এসব হস্তক্ষেপের অধিকার দেয়া হয়নি? দুঃখের বিষয়,বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পুরাপুরি গণহত্যা অনুষ্ঠিত হোল, লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে বাংলার মাটি রঞ্জিত হোল, লক্ষ লক্ষ নারীর আর্তনাদে বাংলার আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠলো, লক্ষ শিশুর আর্তনাদে কেঁদে উঠলো বাংলার গাছপালা, কিন্তু তাতে জাতিসংঘের গলাবাজ সদস্যদের হৃদয় সামান্যতমও কাঁপলো না। মানুষের মরণ আর্তনাদ তাদের কানে পৌছালো না। তারা নির্বিকার চিত্তে সম্মতি জানালো পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর কার্যাবলীর প্রতি। তারা গণহত্যা হতে দিলো, তারা অত্যাচারীর পক্ষ অবলম্বন করলো। বিশ্বশান্তির এই সব ধ্বজাধারীদের ধারণা যে, চোখ বুজে থাকলেই কঠিন কঠোর সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে। এদের ধারণা, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র বলেই ন্যায়বিচার করার দরকার নেই। এরা মনে করে, দু’একবার আইন ভঙ্গ হতে দিলে এমন দোষ ঘটে না। এরা ভাবে, যত আইন ভঙ্গ হোক না কেন গোলমালে না জড়িয়ে পড়লেই বাঁচা যাবে। এরা ঠিক করেছে যে, কেবল নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই দেখবো না। দুঃখের বিষয় মহাকালের শিক্ষা এরা ভুলে গেছে। এরা ভুলে গেছে যে, আইন ভঙ্গ হতে দেওয়া কোন উদারতার ব্যাপার নয়, আইন ভঙ্গ হতে দেওয়া দুপক্ষেরই বিপজ্জনক। হিটলার যখন বারবার অন্যায় করছিল তখন বৃহৎ শক্তিগুলো সব মেনে নিচ্ছিল, হিটলার ছোট ছোট দেশগুলো যখন দখল করছিল তখন চেম্বারলিন ছাতা দিয়ে তাকে বাতাস করছিলেন। কিন্তু সেই আইন ভঙ্গকারী হিটলারই কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু ডেকে আনলো, বৃটেন ফ্রান্সসহ বহু দেশে প্রচণ্ড ধ্বংসলীলা চালালো। যদি প্রথম থেকেই বাধা দেয়া হোত তাহলে এই ধ্বংসের সম্মুখীন হতো না পৃথিবী। পৃথিবীর সর্বত্র অন্যায় হচ্ছে। অথচ স্বার্থপরতার জন্য তার প্রতিকার করা হচ্ছে না। বাংলাদেশের মানুষ প্রাণ দিলো, কিন্তু অপরাধীর শাস্তি হলো না। পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলো চেয়ে চেয়ে তাই দেখলো। আমরা ক্ষুদ্র বলেই এই অবহেলা। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা যদি মিথ্যা না হয় তাহলে একদিন অন্যায়ের প্রশ্রয়দানকারীরা উপযুক্ত শিক্ষাই পাবে। অত্যাচারীর পক্ষ অবলম্বন করার জন্য রক্ত দিয়েই শাস্তি পেতে হবে। এবং অত্যাচারীর হাতেই সেই শাস্তি পেতে হবে তাদের। আমার সোনার বাংলার শত শত প্রতিভাকে বিনষ্ট করা হয়েছে। কি আর কোন ভাষায় যে আমরা হাহাকার করবো বুঝতে পারছি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পড়েছি। শত স্মৃতি আজ মনে পড়ছে। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরাও অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। কোন কিছুই দিয়েই তাদের শূন্য স্থান পূর্ণ হবে না। যেসব সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার চিরকালের জন্য হারিয়ে গেলেন তাঁদের অভাবে সারা দেশ আজ কাঁদছে। পায়, হত্যাকারীর সাগরেদ যেন শিক্ষা পায়। তবে এ কথা ঠিক, অপরাধীর বিচারের ভার আমরা নিজের হাতে তুলে নেবো না। বিচার করবেন (মোহাম্মদ আবু জাফর রচিত)