পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

52 | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড দ্বিপ্রহরের অধিবেশনটির আমি প্রত্যক্ষদশী বা শ্রোতা নই। কিন্তু পরবর্তীকালে জেনেছিলাম, সেটির উদ্যোক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জনাব এম এ হান্নান। তিনি ও তার দলের সহকর্মীরা আমাদের কয়েকজন প্রকৌশলীকে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ট্রান্সমিটার ভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ট্রান্সমিটার চালু করিয়েছিলেন। অধিবেশনটিতে ঘোষণা হিসেবে জনাব হান্নানের নাম ও বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল এবং জনাব হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রসঙ্গে পাঁচ মিনিট ভাষণ প্রচার করেছিলেন। অধিবেশনের স্থিতিকালও ছিল ছয় থেকে সাত মিনিট। এমুখো হননি-অধিকন্তু পরবর্তীকালে পাকিস্তান বেতারে কাজ করেছিলাম। সন্ধ্যা৭টা বেজে ৩৫ মিনিটে যে অধিবেশন প্রচার করা হয় সেটার উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলাম আমি। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র নামটি আমিই অন্যতম সহকারী আবুল কাসেম সন্দ্বীপের সঙ্গে আলোচনাক্রমে স্থির এবং অনুমোদন করেছিলাম। ২৬ শে মার্চ, ৭১ সকালবেলা সহসা যখন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র নীরব হয়ে গিয়েছিল, তখন আমি ছিলাম এনায়েত বাজারে দন্তচিকিৎসক মোহাম্মদ শফীর বাড়িতে। তখনই আমার মনে এসেছিল, এখন যদি কিছু একটা করা যেতো! যেটা একজন অসহযোগকারী বাঙালীর জন্যে অত্যান্ত স্বাভাবিক, আগেই বলেছি। মনের কথাটা সে মুহুর্তে আমি শুধু বেগম মুশতার শফীকে বলেছিলাম- তিনি উৎসাহ দিয়েছিলেন। প্রথমেই আমি গিয়েছিলাম ষ্টেশন রোডের রেষ্ট হাউসে আওয়ামী লীগ অফিসে- নেতৃবৃন্দের অনুমোদন নিয়ে যদি পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করা যায়। পরিচিত কারো সঙ্গেই সেখানে আমার দেখা হয়নি। আমি শুধু নিজের নাম-পরিচয় দিয়ে সেখানে অন্যভাবে অসম্ভব রকম কর্মব্যস্ত দু’একজন কর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়াস করেছিলাম। তখন সেখানে অস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছিল। সেখানেই দেখা হয়েছিল অধ্যাপক মমতাজউদ্দীনের সঙ্গে। মমতাজ আমার প্রস্তাব/ পরিকল্পনা শুনেই নিদ্বিধায় সহযোগী হয়েছিলেন এবং নিজেন প্রভাবে আওয়ামী লীগ কর্মী এডভোকেট রফিকের কাছ থেকে একখানা জীপ চেয়ে নিয়েছিলেন। আমাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি প্রসঙ্গটি ছিল আগ্রাবাদ বেতার ভবন এবং কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ভবন এ দুটি এলাকাকে পর্যপ্ত সংখ্যক সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক বা বাঙালী সৈন্য সমাবেশে সংরক্ষিত করা। আমরা দুজন জীপে করে রেলওয়ে বিল্ডিং- এর পাহাড়ে ইপিআর হেড কোয়ার্টার্সে কমাণ্ডার রফিকের কাছে গিয়েছিলাম। তখন বেলা ২ টা কমাণ্ডার আধ ঘণ্টার মধ্যে বেতার ভবনে ২০ জন এবং ট্রান্সমিটারে ১৫ জন ইপিআর পাঠিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আশ্বাস্ত হয়ে আমার রাবেয়া খাতুন লেনে মাহবুব হাসানের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। মাহবুব হাসান বেতার নাটকের শিল্পী- প্রযোজক হিসেবে চট্টগ্রাম বেতারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট, আমাদের প্রকৌশলীদের অনেকের সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব। তার সহায়তায় প্রকৌশলিক প্রস্তুতি সম্পাদন আমার উদ্দেশ্য ছিল। এবার আমরা তিনজন জীপে করে চকবাজার এলাকার বাসিন্দা আমাদের বেতারের দুজন প্রকৌশলীর কাছে গিয়েছিলাম। তারা শর্ত আরোপ করেছিলেনঃ তারা কাজ করবেন, তবে এক, আঞ্চলিক প্রকৌশলীর লিখিত অনুমতি নিতে হবে অথবা দুই, এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেন তারা বাধ্য হয়ে প্রস্তাবিত কাজটি করেছিলেন- অনিশ্চিত ভবিষ্যতে যেন তাদের বিপদ না হয়। বেশ তো! দ্বিতীয় শর্তে আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কেননা তখন যে কোন মুহুর্তে কমাণ্ডার রফিকের বাহিনী এসে পড়বে বলে আমরা আশা করেছিলাম। করেছিলাম। পথে কলেজ রোডে পৌঁছে মমতাজউদ্দীন বললেনঃ আচ্ছা, ভালো কথা, আমরা কিন্তু কি প্রচার