পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

522 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড করবো সেটা একটুও চিন্তাভাবনা করছি না। এক কাজ করা যাক আমি এখানেই নেমে পড়ি এক্সটেম্পোর (তাৎক্ষণিক) কিছু বলতে পারবেন এরকম দু-একজনকে সঙ্গে নিয়ে শিগগিরিই আগ্রাবাদ গিয়ে আপনাদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছি। সেদিন মমতাজউদ্দীন আর আমাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেননি। এখন আমি আর মাহবুব হাসান- আমরা আগ্রাবাদ রোডে জেকস এর সামনে এসে জীপ ছেড়ে দিয়েছিলাম- গাড়ী আর যাবে না, এখানে ছিল ব্যারিকেড। হেঁটে জনশূন্য বেতার ভবনে পৌঁছেই মাহবুব হাসান কন্ট্রোল রুমের সূইচ অন করেছিলেন। এমন সময় টেলিফোন ট্রান্সমিটার থেকে প্রকৌশলী বন্ধুরা মাহবুব হাসানকে জানিয়েছিলেন তারা অনুষ্ঠান এয়ার'-এ দিতে পারবেন না। কেননা ইতিমধ্যেই তারা আঞ্চলিক প্রকৌশলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি সম্মতি দেননি- কাজেই তারা ট্রান্সমিটার ভবন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমি টেলিফোন ধরলাম। বলেছিলাম আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আপনাদের দুই শর্তের একটি কর্যকারী হবে। আঞ্চলিক প্রকৌশলী ঠিক এ কথাটি বলেছিলেন। বেলাল সাহেব আমাকে কেন জড়াচ্ছেন। বেতার কেন্দ্রে আমি তো দু’নম্বর। আপনি বরং নাজমুল আলম সাহেবের পারমিশন নিন। দুপুর বেলা হান্নান সাহেব জোর করে নিয়ে গিয়ে আমাদের হাতে কাজ করালেন, তার জন্য কি যে বিপদ আসে, আমি সত্যি ভয় পাচ্ছি। আমি বলছিলাম- আর ডি সাহেবের বাসায় তো টেলিফোন নেই, ওর সঙ্গে কি করে যোগাযোগ করবো। তিনি বললেনঃ আলম সাহেব এখন আর ডি কাহহার সাহেবের বাসায়। ওখানে টেলিফোন করুন। ঠিক সে সময় আমার খোঁজে এনায়েতবাজার থেকে আবুল কাসেম সন্দ্বীপ ও আবদুল্লাহ আল ফারুক বেতার ভবনে এসে পৌছেছিলেন। জনাব কাহহারের বাসায় টেলিফোন করে আমি কাসেমকে কথা বলতে দিয়েছিলাম। নাজমুল আলম সাহেব ওখানে আছেন কিনা এটাই জেনে নিতে বলেছিলাম। ওদিক থেকে এই অনুসন্ধানের কারণ জানতে চাওয়া হলে কাসেম আমার কথা বলেছিলেন। স্বাভিকভাবেই রিসিভার আমার হাতে এসে গিয়েছিল। নাজমুল আলমের সঙ্গে আলোচনা করে আবদুল কাহহার আমাকে যা বলেছিলেন, তা সক্ষেপে, বেতার ভবন বন্দরে নোঙ্গ করা পাকিস্তনী যুদ্ধজাহাজ বাবর’ সোয়াত-এর শেলিং এর আওতায় যে কোন মুহুর্তে শত্ৰকবলিত হতেপারে। উত্তম হবে কালুরঘাট ট্রান্সমিটারের ক্ষুদে ষ্টুডিওটি ব্যবহার করা- সেটি শহর থেকে বেশ দূরে- সে এলাকার পতন শীঘ্র হবার কারণ নেই। এ ছাড়া একযোগে দুটি ঘর রক্ষা করার জন্যে বাড়তি প্রস্তুতি অবশ্যক। ট্রন্সমিটার ভবনটি ব্রডকাষ্টিং পারপাস-এ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এবারে মাহবুব হাসান, আবুল কাসেম স্বন্দ্বীপ, আবদুল্লাহ আল ফারুক আর আমি কন্ট্রোল রুম থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম। গাড়ি বারান্দায় আমাদের একজন মহিলা ঘোষিকা- তিনি একজন ভদ্রলোককে দেখিযে বলেছিলেনঃ বেলাল ভাই, ইনি আমার চাচা ডাক্তার আনোয়ার- আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। ডাক্তার আনোয়ার বলেছিলেনঃ আচ্ছা আপনারা বেতার চালু কার কি প্রচার করবেন, ঠিক করেছেন? আমি বলেছিলামঃ আগে চালু করার ব্যবস্থা করি, তারপর যা মুখে আসে বলবো। কথা তো সেই একটা, আমরা স্বধীন। তিনি সাইক্লোষ্টাইল করা একটি ক্ষুদ্রকার ঘোষণাপত্র আমার হাতে দিয়ে বলেছিলেনঃ এটা দেখুন তো দুই বা তিন বাক্যবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। পড়েই আমি উল্লসিত হয়েছিলাম। বলেছিলামঃ ভালোই হলো এটা দিয়েই অধিবেশন শুরু করা হবে, আর এরই ভিত্তিতে প্রচার করা হবে সকল বক্তব্য।