পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

54 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৫। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-এর ৩০মে-২৬ নভেম্বর, ১৯৭১ এর নিয়মিত কথিকামালা (অংশ) দালিলপত্র বিশ্ব জনমত ৩০ মে, ১৯৭১ বিশ্বাসঘাতক ইয়াহিয়া সরকার ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র জনতার উপর যে নৃশংস আক্রমণ চালিয়েছে- ইতিহাসে তার তুলনা নেই। আর সে রতের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিশ শতকের ইয়াজিদ ইয়াহিয়ার ঘাতক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের উপর ঔপনিবেশিক শোষণ অব্যাহত রাখার যে চক্রান্ত সাবেক পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে শুরু হয়েছিলো একাত্তরের মার্চ মাসে ঘটলো তারই নগ্ন প্রকাশ। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকেরা তাই আর কোনকিছু রেখেঢেকে রাখতে চায় না। এজন্য তারা কামান-বন্দুক-মেশিনগান-বোমারু বিমান মায় যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাংগালীদের সামনে একটি মাত্র পথ-সে পথ স্বাধীনতা রক্ষার সশস্ত্র লড়াই। বাংলার বীর জনতা সে দায়িত্ব পালন করেছে। আজ তাই স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য। এ সত্য বাংলার সাড়ে সাত কোটি জনতার প্রাণের মন্ত্র- বাংলাদেশের বাঁচার শপথ। বিগত ২৪ বছর বাংলাদেশ শোষিত হয়েছে ধর্ম আর সংহতির নামে। পশ্চিম পাকিস্তানী শোষক গোষ্ঠী লুণ্ঠন করেছে বাংলার সম্পদ-ধ্বংস করেছে বাংলাদেশের আর্থিক মেরুদণ্ড পাট প্রধান অর্থকরী ফসল। আর এ পাট রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকেরা। কিন্তু পাটচাষীরা তাতে কোনো উপকৃত হয়নি। বাংলার গরীব চাষী-শ্রমিকেরা আরো গরীব হয়েছে- তাদের উপর নেমে এসেছে নির্যাতনের চরম দণ্ড। বাংলাদেশ এবং বাংলার জনগণকে বাঁচাবার জন্যই আজ তাই শুরু হয়েছে মরণপথ স্বাধীনতা সংগ্রাম। এ সংগ্রামে শরীক বাংলার বুদ্ধিজীবি, বাংলার কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা সবাই। বাঙালীরা এ সংগ্রামকে আজ নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছে সারা দুনিয়ার মানুষের বিবেক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের অধিকাংশ সদস্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন বাংলার জনগণের প্রতি তাঁদের সমর্থন। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, সিনেটর ফুলব্রাইট এবং আরো কয়েকজন প্রভাবশালী সিনেটর দৃঢ়কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন- পাকিস্তানের জংগী সরকার বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালাচ্ছে তাকে সমর্থন করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। সিনেটের বৈদেশিক সাহায্য সম্পর্কিত কমিটি পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য দেবার প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। ইসলামাবাদের খুনী সরকারের বিশেষ দূত এম, এম, আহমদ হয়েছেন প্রত্যাখ্যাত। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি তাঁর সাথে দেখা করার সকল আবেদন-নিবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী ঘাতকেরা অধুনালুপ্ত পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দেউলিয়াতৃ তুরান্বিত করেছে। যুদ্ধের খরচ দৈনিক দেড় কোটি টাকা। অতএব-চাই-চাই-সাহায্য চাই। সাহায্যের জন্য ভিক্ষাপাত্র নিয়ে দেশ পরিক্রমায় বেরিয়েছিলেন ইয়াহিয়ার দোসর এম,এম, আহমদ কিন্তু সবখানেই ব্যর্থ হয়েছেন- তিনি শূন্য হাতেই ফিরেছেন।