পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

60 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হানাদার বাহিনীর হত্যা, ধ্বংস ও লুণ্ঠন বন্ধ করার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি বৈঠকে আহবান জানান হয়। বিশ্বশান্তি সংসদের সম্পাদকমণ্ডলী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও অন্যান্য রাষ্ট্রবর্গের প্রতি এই মর্মে দাবী জানান যে তারা যেন পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার সাহায্য দান একেবারে বন্ধ করে দেন। বাংলাদেশের শরণার্থী প্রসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে এক আবেদনে বিশ্বশান্তি সংসদের সম্পাদকমণ্ডলী বলেন, যারা মানবিকতার নীতিকে অস্বীকার করে, যারা মানবতাকে হত্যা করে- বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র, সভ্যতা ও মানবতাকে একসঙ্গে খুন করেছে তাদের ক্ষমা নেই। বিশ্বশান্তি সংসদের সম্পাদকমণ্ডলী বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “শান্তি ও মানবতার প্রতি আজও যারা শ্রদ্ধাশীল তাদের প্রক্যেকেরই উচিত পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের কাছে এমন অনুকূল অবস্থা সৃষ্টির দাবী করা, যাতে বাংলাদেশের শরণার্থীরা তাদের স্বদেশে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ জীবন বিশ্বশান্তি সংসদের সম্পাদকমণ্ডলী পাকিস্তান সরকারকে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে জনগণ কর্তৃক গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী করেছেন। বিশ্বশান্তি সংসদের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বাংলাদেশের সংগ্রামকে সাহায্য করার ব্যাপারে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্যে বিশ্বের সকল শান্তি সংস্থার প্রতি আহবান জানানো হয়। বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহবানের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর বহু দেশ থেকে বহু মানবদরদী ও শান্তি সংস্থা সেক্রেটারী জেনারেল উত্থান্টের কাছে তারবার্তা পাঠিয়েছেন। এইসব তারবার্তায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান ঘটনাবলী যেহেতু ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায় সেই কারণেই বাংলাদেশের ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনার জন্যে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। অথচ কয়েকদিন আগে পর্যন্ত ইয়াহিয়া সরকার তার বেতার, টেলিভিশন ও কূটনৈতিক মিশনসমূহের মাধ্যমে এই ঘটনাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে প্রচার করছিলো। বাংলাদেশে তাদের সেনাবাহিনীর নির্বিচার গণহত্যাতে তারা বাঙ্গালী-অবাঙ্গালীর মধ্যে সংঘর্ষ ও কমিপয় দুস্তৃকারীর কার্যকলাপ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাদের সে অপকীর্তি বিশ্ববিবেকের চোখে এখন পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে। জানি না ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার এই কেলেঙ্কারির পর আবার কোন ছেদো কাহিনীর আশ্রয় নেবেন- তবে সত্য ঢাকতে গিয়ে, অপরাধ গোপণ করতে গিয়ে তারা যে কৌশলই অবলম্বন করুন না কেন পরিণতি তাদের একই হবে। কারণ, খোঁড়ার পা গর্তেই পড়ে। ২৭ জুন, ১৯৭১ সম্প্রতি বার্লিন থেকে প্রকাশিত জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সরকারের এক ইশতেহারে ঘোষণা করা হয়েছে যে, পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের ব্যাপক গণহত্যা, লুঠতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতনের ফলে ংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ নরনারী আর যাতে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য না হয় এবং ইতিমধ্যেই যে ৬০ লক্ষ বাঙালী দেশ ছেড়ে ভারতে শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছে তারা যাতে অবিলম্বে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে এবং বাংলাদেশে যাতে তাদের জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হয় তার জন্য কালবিলম্ব না করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ যাতে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তার জন্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এইসব কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যেই বাস্তবসম্মত, উপযুক্ত এবং স্বায়ী সমাধানের পথ নিহিত আছে।