পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

61 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড জার্মান গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের এই ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা এবং সেখানকার গণনির্বাচিত নেতৃবর্গের পরামর্শ ও পরিকল্পনার ভিত্তিতেই মৌলিক রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের এক সঠিক ও সহজ পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। জার্মান গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের এই ইশতেহারকে বিশ্বের সকল দেশের রাজনৈতিক মহল দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। তাঁরা বলেন, এই ইশতেহারে বাংলাদেশ থেকে যেসব শরণার্থী ভারতে চলে গেছে তাদের সমস্যাকে শুধু যে কেবল আন্তর্জাতিক সমস্যা বলে বর্ণনা করা হয়েছে তা নয়। এই ইশতেহারে দাবী করা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রত্যাহার, শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব রাজনৈতিক নেতার মুক্তি, আওয়ামী লীগের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, গণনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রভৃতি। ইউরোপ ও আমেরিকার পত্রপত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশনসমূহের প্রকাশিত ও প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদ ও মন্তব্যে বলা হয়ঃ গত ২৫ শে মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশে যে বর্বরতা চালিয়েছে তাতে বাংলাদেশ থেকে আরও লক্ষ লক্ষ নরনারী দেশছাড়া হতে বাধ্য হবে। গত ১৯৭০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিলো তাতে অনুমানিক ১৮ থেকে ২০ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছে এবং এই ব্যাপক প্রাণহানির মূল্যেও পশ্চিম পাকিস্তানীদের প্রচ্ছন্ন কারসাজি ছিলো। যেসব ব্যবস্থা অবলম্বন করলে ঘূর্ণিঝড়ে ও জলোচ্ছাসে মৃত্যুর হাত থেকে শতকরা ৯৫ জন অব্যাহতি পেতে পারতো, পশ্চিম পাকিস্তানীরা তথা ইয়াহিয়া সরকার ইচ্ছা করেই সেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমন কি ব্যাপক প্রাণহানির খবরটুকু পর্যন্ত চেপে গেছে। বাইরের জগত যেটুকু জেনেছে তা বাংলাদেশের বেসরকারী কতগুলো পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এবং বিদেশী সাংবাদিকদের খবর থেকে। গত ২৫শে মার্চ থেকে ইয়াহিয়া সরকার বাংলাদেশে যে গণহত্যা চাললো, এর খবরও তারা চেপে গেছে। ইয়াহিয়ার জঙ্গী বাহিনী ১০ লাখ নরনারীকে গুলি করে ও আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। লণ্ডনে কমনওয়েলথ প্রেস সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা থেকে এই তথ্য উদ্ধৃত করা হয়। অনেকগুলো পত্র-পত্রিকায় একরম মন্তব্য করা হয়েছে যে, পবিত্র বাইবেল গ্রন্থে বর্ণিত মুসার (আঃ) যুগে মিশরের উপর পর পর যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় এসেছিলো তাতেও এত প্রাণহানি ঘটেনি। পশ্চিম পাকিস্তানীরা এ পর্যন্ত যত বাঙালী খুন করেছে তার দ্বিতীয় কোন দৃষ্টান্ত নেই। এত নরহত্যা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এ পর্যন্ত কখনও ঘটেনি। ২৮ জুন, ১৯৭১ বিশ্বব্যাঙ্ক পাকিস্তানকে আর কোন আর্থিক সাহায্য দেবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক “ওয়াশিংটন পোষ্ট’-এ প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয় যে, সম্প্রতি প্যারিস পাকিস্তানকে সাহায্য দানকারী কনসর্টিয়ামভুক্ত ১১টি দেশের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কনসর্টিয়ামভুক্ত দেশসমূহের প্রতিনিধিগণ স্থির করেছেন যে, বাংলাদেশে সবদিক থেকে পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত পাকিস্তানকে নতুন করে কোন রকম আর্থিক সাহায্যদানের প্রশ্নই উঠতে পারে না। বরং পাকিস্তান এ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব ঋণ নিয়েছে সেগুলোই সুদে-আসলে আদায় করা হবে। বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে যে, আর্থিক সাহায্য লাভের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্যে পাকিস্তান যত কান্নাকাটিই করুক না কেন, এ ব্যাপারে কনসর্টিয়ামের আর কোন বৈঠক বসবে না।