পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

69 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড রাখতে গিয়ে তাদের যে কী পরিমাণ দিতে হচ্ছে তা একমাত্র তারাই জানে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ ইতিমধ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশে সরকারের অধীনে নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে উঠছে। সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছেন। বাংলাদেশের সর্বত্রই এখন গেরিলা যুদ্ধ চলছে- শুধুমাত্র তাই নয়, ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনীতেও গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। ‘আইরিশ টাইমস’ পত্রিকায় আরও বলা হয় যে, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে সামরিক সমাধানের পথ বেছে নিয়ে যুদ্ধ চালাচ্ছে। বর্তমানের এই দারুণ সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতিতে শরণার্থীরা দেশে ফিরে যেতে পারে না। ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী ও সরকার যেখানে আজও হত্যা, লুণ্ঠন ও নির্যাতন সমানে চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। ভারতে এভাবে লাখ লাখ শরণার্থ ঠেলে দিয়ে ইয়াহিয়া সরকার প্রকৃতপক্ষে ভারতের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে চাইছে। পত্রিকায় বলা হয়ঃ বাংলাদেশ সমস্যার প্রকৃত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির দিকেই যাবে এবং তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। স্টকহোম থেকে প্রকাশিত সুইডিশ দৈনিক, DOGENS NYHETER-এর এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে পাকিস্তানকে বাংলাদেশে সামরিক তৎপরতা বন্ধ করে বাংলাদেশের জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলা হয়। ‘ডগেনস নিহিতের পত্রিকার এই সম্পাদকীয় নিবন্ধটিতে ইয়াহিয়ার সামরিক অভিযানের কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়ঃ বাংলাদেশে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতা বর্তমানে চরমে পৌছেছে। এখনও বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ শরণার্থী সৈন্যদের তাড়া খেয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পত্রিকায় বলা হয়ঃ বাংলাদেশে সামকি বর্বরতা সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে গিয়ে কিছু সময় দাঁড়ালেই ইয়াহিয়ার স্বাভাবিক পরিস্থিতির দাবীর অসারতা সহজেই ধরা পড়েবোঝা যায় ইয়াহিয়া সরকারের মিথ্যা প্রচারণার বহর। ২৩ জুলাই, ১৯৭১ ... সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউন থেকে প্রকাশিত ‘মেইল পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা জুড়ে এক দীর্ঘ রিপোর্ট বেরিয়েছে। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শরণার্থী সম্পর্কে লিখতে গিয়ে ফ্রিটাউন দৈনিকের সংবদদাতা Mr. SOM SHORT প্রশ্ন করেছেনঃ বাংলাদেশে যা ঘটেছে তার চেয়ে বেশি কিছু কি ঘটতে পারতো? তিনি লিখেছেনঃ বাংলাদেশে যে ভয়ঙ্কর একটা কিছু ঘটেছে এবং এখনও ঘটছে, তা বোঝার জন্যে বা তা বিশ্বাস করার জন্য এর চেয়ে বেশী প্রমাণের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। বাংলাদেশের ঘটনাবলী স্বচক্ষে দেখে ফ্রিটাউন দৈনিক মেইল-এর সংবাদদাতা Mr. SOM SHORT বলেন, পাকিস্তান সরকারের নীতি ও কার্যকলাপের পশ্চাতে যে একটা ভীষণ ষড়যন্ত্র বা ভয়াবহ একটা কিছু আছে তা আমি বুঝতে পেরেছি। তিনি লিখেছেন, পশ্চিম পাকিস্তানীদের বর্বরতা ক্রমে বেড়েই চলেছে, যুদ্ধ যতো দীর্ঘস্থায়ী হবে বাংলাদেশে ধ্বংস ও মৃত্যু ততো বেড়ে যাবে। পৃথিবীর সকল দেশের মানুষই তো এখন এখানকার ঘটনাবলীর অল্পবিস্তর জানতে পেরেছে কিন্তু তবু আমরা আমাদের নিজ নিজ দেশের সরকারকে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টিতে বাধ্য করতে পারছি না কেন?- এই রক্তমানের কি কোন শেষ নেই?