পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৯৪
শিরোনাম সূত্র তারিখ
গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দাবী সম্বলিত গণতান্ত্রিক যুবলীগের পুস্তিকা পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮

গোড়ার কথা

 গত ১৯৪৭ সালে ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। ইহার এক মাস পরে সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলনে মিলিত হইয়া পাকিস্তান সংগ্রামে যাহারা পুরোভাগে ছিল সেই যুব সমাজ গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠন করিয়া পাকিস্তানকে স্বাধীন, সুখী এবং সমৃদ্ধিশালী করিয়া গড়িয়া তুলিবার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে। যুবসমাজ দাবী করে সুখী ও স্বাধীন পাকিস্তান গঠনের জন্য বৃটিশ কমনওয়েলথের বাহিরে আসিয়া পূর্ণ আজাদী ঘোষণা করিতে হইবে, পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতা, রাজনৈতিক এবং আর্থিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে এবং জনগণের সহযোগিতাতেই পাকিস্তান গড়িয়া তুলিতে হইবে। যুবলীগ সরকারের সহযোগিতায় কাজে ঝাঁপাইয়া পড়ে। বিগত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও খাদ্যসংকট সমাধান আন্দোলনে যুবলীগের নেতৃত্বে যুবসমাজ বিপুলভাবে সাড়া দিয়াছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যুবসমাজ পুরোভাগে আগাইয়া আসিয়াছে।

 পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হইবার পর এক বছর পার হইয়া গিয়াছে। পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের ৭ কোটি জনসাধারণের উন্নতির জন্য যুবসমাজ কতটুকু করিতে পারিয়াছে এবং স্বাধীন সুখী পাকিস্তান গঠনের প্রতিজ্ঞা কতখানি সফল হইয়াছে যুবসমাজ তাহা আজ খতাইয়া দেখিবে।

 পাকিস্তান আজও বৃটিশ কমনওয়েলথের বাহিরে আসিয়া পূর্ণ আজাদী ঘোষনা করে নাই। পাকিস্তানে ব্যক্তিস্বাধীনতার কবর দেওয়া হইয়াছে। সভা সমিতির অধিকার হরণ, বিনা বিচারে আটক, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ এবং অর্ডিন্যান্স রাজের স্টীমরোলার আজ পাকিস্তানে বিভীষিকার সৃষ্টি করিয়াছে। রাজনৈতিক এবং আর্থিক গণতন্ত্র অর্থহীন হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কৃষকের ভাগ্যে জমি মিলে নাই। মজুরের মজুরী বাড়ে নাই। ছাঁটাইয়ের কবলে পড়িয়া লক্ষ লক্ষ লোক জীবিকাহীন হইয়া পড়িয়াছে। খাদ্য সংকট গভীর হইয়া দেখা দিয়াছে। কৃষক, মজুর, মধ্যবিত্ত সকলের জীবনেই সংকট গভীর হইয়া দেখা দিয়াছে। স্বাধীন পাকিস্তানে খাইয়া পরিয়া বাঁচিবার আকাঙ্খা ধূলিসাৎ হইয়া গিয়াছে, পূর্ণ আজাদী, গণতন্ত্র এবং সুখী জীবনের পরিবর্তে নূতন দাসত্ব এবং অনাহারের শৃংখলে জনগণ শৃংখলিত হইতেছে।

 মুষ্টিমেয় লোক অগণিত জনসাধারণকে অস্বীকার করিয়া নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য পাকিস্তানকে ব্যবহার করিতেছে। মুষ্টিমেয় কায়েমী স্বার্থবাদীর স্বার্থকে পাকিস্তান এবং ইসলামের স্বার্থ বলিয়া সরকারী নীতি নির্ধারণ করা হইতেছে। পাকিস্তানের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি আজ মেহনতকারী মানুষের বিরুদ্ধে নির্ধারিত হইতেছে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পরিবর্ত্তে ধনিক দাসত্বই জনগণের জীবনে চরম সত্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

 সুখী পাকিস্তান গঠনের জন্য জনগণের সহযোগিতার আকাঙ্খা এবং যুবসমাজের পবিত্র প্রতিক্ষা আজ মেশিনগানের সামনে রুদ্ধ হইবার উপক্রম হইয়াছে। সহযোগিতার আকাঙ্খাকে পাকিস্তানের দুশমনী বলিয়া আখ্যা দেওয়া হইতেছে। কিন্তু যুবসমাজ তাহাদের পবিত্র প্রতিজ্ঞা কার্য্যকরী করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যুবসমাজ জানে কোন একজন ব্যক্তির কৃতিত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। লক্ষ লক্ষ জনসাধারণের সংগ্রামেই এই পাকিস্তান আসিয়াছে এবং সুখী পাকিস্তান গঠনের অধিকার তাহাদেরই, কোন শক্তিই জনসাধারণের পথ রোধ করিতে পারিবে না। জনসাধারণের শক্তিতে অটল বিশ্বাস লইয়াই যুবসমাজ অগ্রসর হইবে।