পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৯৭

 যুব আন্দোলনকে নূতন ও উচ্চস্তরে আগাইয়া লইয়া যাইতে হইলে অবিলম্বে প্রয়োজন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর গত এক বছরের রাজনৈতকি ও অর্থনৈতিক অবস্থা ভালভাবে পর্যালোচনা করিয়া নূতন কর্ম্মপদ্ধতি গ্রহণ করা। সামান্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করিলেই “গণদাবীর সনদই” যুব আন্দোলনের মূল প্রোগ্রাম হিসাবে এখনও গ্রহণ করা যাইতে পারে বটে কিন্তু মুহূর্ত্তের প্রয়োজন হইল উক্ত প্রোগ্রামকে কার্যকরী করিবার আন্দোলন গড়িয়া তোলার সম্বন্ধে কর্ম্মপন্থা নির্ধারণ করা।

১৫ই আগষ্ট ১৯৪৭ হইতে ১৫ই আগষ্ট ১৯৪৮-আমরা কি চাহিয়াছিলাম এবং কি পাইয়াছি

 গত ঢাকা সম্মেলনে যে “গণদাবীর সনদ” গৃহীত হয় তাহাতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, আর্থিক গণতন্ত্র, কৃষি পুনর্গঠন, শিল্প বিপ্লব প্রভৃতি মূলদাবীর কথা বলা হইয়াছে। এই সনদের অর্থই হইল পরাধীন দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া নূতন বুনিয়াদের উপর দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করা। কিন্তু বর্ত্তমান সরকার পুরাতন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই কায়েম রাখিতে যে বদ্ধপরিকর গত এক বছরের কার্য্যাবলী লক্ষ্য করিলেই তাহা ধরা পড়ে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র?

 আমাদের দাবী ছিল পাকিস্তান বৃটিশ সাম্রাজের বাহিরে একটি স্বাধীন ও সার্ব্বভৌম গণরাষ্ট্র হোক অথচ ১৯৪৮ সালের জুন মাসে বর্তমান শাসকমণ্ডলী সার্বভৌম ঘোষণা না করিয়া ইংরাজ রাজার জন্ম দিবস পালন করিল। কায়েদ-এ-আজম পূর্ব্বেই ঘোষণা করিয়াছেন যে বৃটিশ কমনওয়েলথের ভিতরে থাকাই তাঁহার ব্যক্তিগত মত। এখনও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কার্য্যে ইংরাজ গভর্ণর, উপদেষ্টা ও বড় বড় অফিসার নিযুক্ত থাকিয়া গরীব দেশের কোটি কোটি টাকা লুটিতেছে, আমাদের রাষ্ট্রের উপর তাহাদের প্রভাব বজায় রাখিতেছে। ইহাই কি স্বাধীনতা? এই সকল ঘটনা হইতেই পরিষ্কার বোঝা যায় বর্তমান প্রকৃত স্বাধীনতা নয়, মেকি স্বাধীনতা মাত্র।

 আমরা দাবী করিয়াছিলাম পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষী প্রদেশকে আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হউক। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব জনগণের উপর ন্যস্ত থাকিবে। অথচ বর্তমান শাসক শ্রেণী আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বদলে সমগ্র ক্ষমতা কেন্দ্রীয়করণের উপর জোর দিতেছে। খুশীমত যে কোন প্রদেশের অধিকার হরণ করিতেছে (সিন্ধু হইতে করাচীকে বিচ্ছিন্ন করা) সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা হরণ করিবার এমন কি প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় আইন সভার হাত হইতেও ক্ষমতা কাড়িয়া সমস্ত ক্ষমতা বড় লাটের হাতে কেন্দ্রীভূত করিতেছ। ইহাই কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নমুনা?

মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার?

 আমাদের সনদে দাবী করা হইয়াছিল প্রত্যেক বয়স্ক লোকের ভোটাধিকার চাই কিন্তু এখন পর্যন্ত সকল নির্ব্বাচনই ইংরাজ মার্কা পদ্ধতিতেই চলিয়াছে। অর্ডিন্যান্স করিয়া জনগণের অধিকার হরণ করা চলে কিন্তু অধিকার দান করা চলে না।

 আমরা দাবী করিয়াছিলাম ব্যক্তিস্বাধীনতা চাই অর্থাৎ মতামত প্রকাশের সভা ও সমিতি, শোভাযাত্রা, সংগঠন গঠনের, পত্রিকা ও প্রকাশের, বিক্ষোভ ও প্রদর্শন ও ধর্ম্মঘটের, বিনা বিচারে আটক না রাখার স্বাধীনতা চাই। কিন্তু গত এক বছরের অভিজ্ঞতার ফলে একথা জোরের সাথেই বলা যায় যে, আজ যেভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করা হইতেছে এবং সকল রকমের বিরোধিতা ও সমালোচনার টুটি টিপিয়া বন্ধ করা হইতেছে, ইংরাজ আমলেও ইহার চাইতে বেশী কিছু করা সম্ভব হয় নাই। পুলিশ, গোয়েন্দা ও কায়েমী স্বার্থের দল হাত ধরাধরি