পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১০৬

বাসস্থান ইত্যাদি শ্রমিকদের কোন দাবীই সরকার পূরণ করে নাই উপরন্তু রেল শ্রমিক আন্দোলনের উপর ব্যাপক দমননীতি প্রয়োগ করা হইতেছে। তাই রেলশ্রমিকরা বাধ্য হইয়া নিম্মলিখিত পাঁচটি মূল দাবীর ভিত্তিতে সাধারণ ধর্ম্মঘটের প্রস্তুতির জন্য স্ট্রাইক ব্যালট গ্রহণ করিতেছেঃ

(১) পুরাতন পে কশিশনের রায় চালু করিতে হইবে।
(২) ছাঁটাই বন্ধ করিতে হইবে।
(৩) গ্রেনশপের তালিকাভূক্ত দ্রব্য পূর্ণ সরবরাহের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
(৪) বাসস্থানের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
(৫) দমননীতি বন্ধ করিতে হইবে এবং ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হইবে।

 এই সম্মেলন রেল শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া ন্যায্য বলিয়া মনে করে এবং দাবী আদায়ের জন্য শ্রমিকদের ধর্ম্মঘটের সিদ্ধান্তকে পূর্ণভাবে সমর্থন করিতেছে এবং তাহাদের সংগ্রাম সর্ব্বপ্রকার সাহায্য ও সহানুভূতির প্রতিশ্রুতি দিতেছে। রেল ধর্ম্মঘটকে সাফল্যমণ্ডিত করিবার জন্য এই সম্মেলন বিভিন্ন রেলশ্রমিক প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করিবার আহবান জানাইতেছে।

৪। ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য লড়ো

 আজাদ পাকিস্তানে ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ চরম পর্য্যায়ে উঠিয়াছে। ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণে পাকিস্তান সরকার সাম্রাজ্যবাদীদেরও ছাপাইয়া উঠিয়াছে। সভা, শোভাযাত্রা করিবার অধিকার ব্যাপকভাবে খর্ব্ব করা হইতেছে। ১৪৪ ধারার যথেচ্ছ প্রয়োগ, বিনা বিচারে আটক, অন্তরীণ ও বহিষ্কার আদেশ, গ্রেপ্তারী পরওয়ানা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে। দমননীতি, পুলিশ জুলুম ও অর্ডিন্যান্স-রাজ পাকিস্তানবাসী জনসাধারণের জীবনে বিভীষিকা সৃষ্টি করিয়াছে।

 এই সম্মেলন ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর সরকারী আক্রমণ এবং দমননীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করিতেছে এবং অবিলম্বে সমস্ত বিনা বিচারে আটক বন্দীদের মুক্তি, ১৪৪ ধারা, গ্রেপ্তারী পরোয়ানা, অন্তরীণ ও বহিষ্কার আদেশের আশু প্রত্যাহার দাবী করিতেছে।

 দমননীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়িয়া তুলিয়া ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য এই সম্মেলন দলমত নির্ব্বিশেষে সমস্ত যুবক ও জনসাধারণকে আহবান জানাইতেছে।

৫। যুব আন্দোলনের উপর হামলা বরদাস্ত করা হইবে না।

 এই সম্মেলন গভীর উৎকণ্ঠার সহিত লক্ষ্য করিতেছে যে, পাকিস্তান সরকার ‘গণতান্ত্রিক যুবলীগ’ প্রতিষ্ঠিত হইবার পর হইতে ইহার উপর হামলা শুরু করিয়াছে। সম্প্রতি ঢাকায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় অফিস খানাতল্লাশী করা হইয়াছে। যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত মিঃ আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করা হইয়াছে এবং প্রাদেশিক কমিটির সদস্য মিঃ আবদুল আওয়ালের উপর ময়মনসিংহ জিলা হইতে বহিষ্কার আদেশ জারী করা হইয়াছে।

 এই সম্মেলন, যুবলীগের প্রতি সরকারী দমননীতির তীব্র প্রতিবাদ করিতেছে এবং অবিলম্বে মিঃ আতাউর রহমানের উপর হইতে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং মিঃ আব্দুল আউয়ালের উপর হইতে বহিস্কার আদেশ উঠাইয়া লইবার দাবী জানাইতেছে।