পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১০৭

৬। ব্যাপক ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াও

 এই সম্মেলন বিশেষ উৎকণ্ঠার সহিত লক্ষ্য করিতেছে যে, পাকিস্তান সরকারের ছাঁটাই-নীতি দেশের মধ্যে এক ভয়ানক বিভীষিকার সৃষ্টি করিয়াছে। ছাঁটাই নীতির কবলে পড়িয়া হাজার হাজার দরিদ্র কর্মচারী ও মজুরের সংসার ছারখার হইয়া যাইতেছে। এই সম্মেলন সরকারের এই ছাঁটাই নীতির তীব্র প্রতিবাদ জানাইতেছে এবং সম্মেলন মনে করে যে, এইরূপে সমস্যা বাড়িবে কিন্তু কমিবে না। সুতরাং সম্মেলনের দাবী যে, ছাঁটাই নীতি অবিলম্বে বন্ধ করিতে হইবে এবং যাহাদিগকে ছাঁটাই করা হইয়াছে তাহাদিগকে পুনর্নিয়োগ করিতে হইবে।

৭। ধ্বংসমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাও

 পূর্বপাকিস্তানে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভীষণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হইয়াছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, রংপুর প্রভৃতি জেলায় বিদ্যালয়ে সরকারী দপ্তর স্থাপন করিবার চেষ্টা করিয়াছিল কিন্তু সংঘবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন দ্বারাই সরকারী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে। পাকিস্তান লাভের আগে রাজশাহী জেলায় প্রাইমারী স্কুল ছিল ১২০০ শত, বর্তমান সরকার তাহাকে ৮০০ শতে নামাইবার ব্যবস্থা করিয়াছেন। প্রাইমারী শিক্ষকগণের মাহিনা প্রয়োজনের তুলনায় অকিঞ্চিৎকর কিন্তু তাহাও নিয়মিত পাইতেছে না।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নূতন সিলেবাস অনুযায়ী নূতন পুস্তক এখনও পর্য্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে বাজারে বাহির না হওয়ার জন্য ছাত্রদের পড়াশুনা ভয়ানক ক্ষতি হইতেছে এবং বিভিন্ন সাময়িক পরীক্ষাগুলি বন্ধ রহিয়াছে।

 ছাত্রদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য খাতা, পেন্সিল, কাপড়, কেরোসিন প্রভৃতির অভাবে ছাত্র জীবন বিপন্ন কিন্তু সরকারের তরফ হইতে কোন প্রকার সাহায্য তো করা হয় নাই বরং যাহারা নিত্য প্রয়োজনীয় দাবী লইয়া আন্দোলন করিতেছে তাহাদের উপর সরকারী দমননীতি নগ্নরূপে প্রকাশ পাইতেছে। আজ শিক্ষা জীবনে যে সংকট দেখা দিয়াছে তাহা রোধ করিবার জন্য অবিলম্বে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি কার্যকরী করিবার জন্য এই সম্মেলন সরকারের নিকট দাবী জানাইতেছে; এবং এই সমস্ত দাবী সরকার যাহাতে কার্যকরী করেন তাহার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়িয়া তুলিবার জন্য ছাত্রসমাজকে আহবান জানান যাইতেছেঃ

(১) কোন প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা হাই স্কুল তুলিয়া দেওয়া চলিবে না।
(২) শিক্ষকগণকে মানুষের মত বাঁচিবার উপযোগী বেতন দিতে হইবে।
(৩) বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যমরূপে চালু করিতে হইবে।
(৪) বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করিতে হইবে।
(৫) ছাত্রদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস খাতা, পেন্সিল, বই, কেরোসিন ইত্যাদি নিয়মিত সরবরাহের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
(৬) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অন্যান্য কলেজে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকের যে সমস্ত পদ খালি রহিয়াছে তাহার পূরণ করিতে হইবে।
(৭) শিক্ষালয়ে পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে ইউনিয়ন চালু করিতে হইবে।

৮। জনস্বাস্থ্যের প্রতি সরকারী উদাসীনতার প্রতিকার চাই

 পূর্বপাকিস্তানে জনস্বাস্থ্য বিপন্ন হইয়াছে। জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা নগণ্য। ঔষধপত্র বাজারে দুষ্প্রাপ্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে। যাহাও আসিতেছে অগ্নিমূল্যের জন্য জনসাধারণের আয়ত্তের বাহিরে। ঔষধপত্র