শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে স্বাধীনতার পক্ষে ডঃ শহীদুল্লাহ | “শহীদুল্লাহ সম্বর্ধনা গ্রন্থ এবং বদরুদ্দীন উমরের পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি” | ডিসেম্বর, ১৯৪৮ |
পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন ঢাকা অধিবেশনে মূল সভাপতির অভিভাষণ
৩১-১২-১৯৪৮ইং
সমবেত সাহিত্যিক ও সাহিত্যরসিক বন্ধুগণ,
দয়াময় খোদাতায়ালার অসংখ্য ধন্যবাদ, আমরা আজ এক স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রাদেশিক রাজধানীর বুকে মুক্ত আকাশের নীচে মুক্ত-মানুষরূপে সমবেত হতে সক্ষম হয়েছি। জাহাঙ্গীর, শায়েস্তা খান ও ইসলাম খান পূর্ববঙ্গের এলাকাধীন রাজধানী সোনারগাঁও ন্যায়বান বাদশাহ গিয়াসুদ্দীন আযম শাহের পুণ্য স্মৃতি আজও বুকে ধরে আছে। স্মৃতি আমাদের নিয়ে যায় ঢাকার অদূরবর্তী বিক্রমপুরে সেন রাজাদের শেষ রাজধানীতে, যেখানে একদিন লক্ষণ সেন, কেশব সেন ও মধু সেন রাজত্ব করেছিলেন। দূর স্মৃতি আমাদের টেনে নিয়ে চলে বিক্রমপুরের সন্নিকট রাজা রামপালের স্মৃতিচিহ্ন রামপালে এবং বৌদ্ধ মহাপণ্ডিত শীলভদ্র, কমলশীল ও দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশের স্মরণপূত অধুনা-বিস্মৃত জন্মভূমিতে। এই অঞ্চল যেমন বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলমানের স্মারকলিপি হয়ে আছে, প্রার্থনা করি তেমনই এ যেন নূতন রাষ্ট্রের জাতি বর্ণ ধর্ম্ম নিবির্বশেষে সকল নাগরিকের মিলনভূমি হয়। আমীন!
পূর্ব বাংলার বিশেষ গৌরব এই যে, এই প্রদেশের প্রাচীন নাম বাঙ্গাল থেকে সমস্ত দেশের নাম হয়েছে বাঙ্গালা বা বাংলা। এই বঙ্গাল নাম পাই আমরা রাজেন্দ্র চোড়ের তিমরুলৈ লিপিতে (১০২৩ খ্রীঃ অব্দে)। বৌদ্ধযুগের কবি ভুসুকু একটি চর্য্যাগীতিতে বলেছেন
“বাজ-ণাব পাড়ী পউঅী খালে বাহিউ।
অদ্বয় বঙ্গাল দেশ লুড়িউ”।
—বজ্রযানরূপ নৌকায় পাড়ি দিয়ে পদার খালে বাইলাম। অদ্বয়-রূপ বঙ্গাল দেশ লুট করলাম। -এতে বুঝতে পারি যে পদ্মা নদীর পারেই হ’ল বঙ্গাল দেশ। “বাঙাল” আমাদের নিন্দার কথা নয়, এই দেশবাসীর প্রাচীন নাম। শীরাযের অমর কবি হাফিয সোনারগাঁওয়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহকে যে গযল কবিতা উপহার পাঠিয়েছিলেন, তাতে বলেছেন
“শক্কর-শিকন শওন্দ হমা তৃতীয়ানে হিন্দ।
যে কন্দে পারসী কে ব-বঙ্গালা মী রওদ।”
-ভারতের তোতা হবে চিনি খেকো সকলি।
পারসীর মিছর এই যে বাঙ্গালায় চলিছে।
কেবল হাফিয নন, মিথিলার বিদ্যাপতিও বাংলার এই সুলতানকে প্রশংসা করেছেন- “মহলম যুগপতি চিরজীব জীবথু গ্যাসদীন সুরতান’।