পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড

“চনন চৌকী বো রূপী ঝাড়িয়াঙ রাজা গোপীচন্দ নহাএ।
তা অম্বর ভোলা বো অঘণা চান্দী বর্ণা ঠভী বুন্দ কতেীও আএ।
তা সজে বো বৈঠী মাতা নৈনবন্তী নৈন-ভর ভরী টোএ।
তা ফির উপড়হুঙ হেরে রাজা গোপীচন্দ তা মাতা নৈনবন্তী রোএ।”


-চন্দনের চৌকিতে রূপার ঘড়ায় রাজা গোপীচাঁদ করে।
আকাশ পরিস্কার চাঁদীবর্ণ, ঠাণ্ডা বৃষ্টিবিন্দু কোথা থেকে আসে?
বারান্দায় বসে মা ময়নামতী চোখ ভরে ভরে কাদে।
তখন ফের উপর দিকে চেয়ে দেখে রাজা গোপীচাঁদ,
মা ময়নামতী কাঁদে।

 এই পূর্বাঞ্চলের ভীম, দিব্বোক, ঈসা খান, চাঁদ রায়, কেদার রায় প্রভৃতি বীরেরা সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচারী রাজশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। পূর্ববঙ্গের সাহসী সন্তানেরা শুধু আজ নয়, প্রাচীন কাল থেকে সমুদ্রযাত্রায় নির্ভীক। এরাই একদিন সুমাত্রা, জাভা, বালিদ্বীপ, কম্বোডিয়া এবং বর্ণিও পর্য্যন্ত সাগরে পাড়ি দিত। মহাকবি কালিদাস নৌ বিদ্যায় দক্ষ বঙ্গবাসীর উল্লেখ করেছেন। কবিকঙ্কণ প্রচীন ঐতিহ্য অনুসরণ করেই ধনপতি সদাগরের জাহাজের মাঝি-মাল্লাদিগকে পূর্ব্ববঙ্গবাসী বলে বর্ণনা করেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এবং পূর্ব্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ধর্ম, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বাংলার ছাপ রয়েছে। বাংলার উপকথা এখনও সেখানে প্রচলিত আছে। বাংলার রক্ত যে তাদের রক্তের সঙ্গে মেশেনি, তা কে বলতে পারে? জাভার বরবুদুরের স্থাপত্য উত্তর বঙ্গের পাহাড়পুরের মঠের স্থাপত্যের অনুকরণে।

 প্রাচীন রাঢ়, বরেন্দ্র এবং বঙ্গ নিয়েই আমাদের বাঙ্গালা দেশ। রাঢ় ব্রাহ্মণ্য ধর্ম্মকে আঁকড়ে ছিল। সেখানে শূর বংশীয় রাজারা রাজত্ব করতেন। এই বংশের আদিশূর বাইরে থেকে ব্রাহ্মণ আমদানী করে হিন্দুত্বকে বাঁচিয়ে রাখেন। শুর বংশের পর সেন বংশ এই রাঢ় থেকেই রাজত্ব বিস্তার করেন। তাঁরাও গোঁড়া হিন্দু ছিলেন। বল্লাল সেন কৌলীণ্য প্রথা চালিয়ে আদিশূরের ধারাকেই স্থায়ী করেন। তুর্কিদের বাংলা বিজয়ের সূত্রপাত রাঢ় থেকে হলেও এখানে ইসলাম তেমন বিজয়ী হতে পারিনি। বরেন্দ্র ও বঙ্গ মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে বৌদ্ধ বা নাথপন্থী ছিল। তারা সনাতন পন্থীদের দ্বারা নির্য্যাতিত হচ্ছিল। এমন সময়ে আসে তুর্কিদের হামলা। তারা এই বিদেশীদের রক্ষাকর্তা মনে ক'রে বোধ হয় সাহায্য করেছিল এবং পরে সাম্যবাদী ইসলাম ধর্মের শীতল ছায়ার আশ্রয় নিয়েছিল। তাই আজ পূর্ব পাকিস্তান হওয়া সম্ভবপর হয়েছে। নাথপন্থীদের একটি ছড়ায় এই যুগের অহিন্দু জনসাধারনের মনের ছাপ রয়েছে-

 “জাজপুর পুরবাদি  সোল সআ ঘর বেদি
বেদি লয় কেবোল দুর্জন
দখিন্যা মাগিতে জাঅ  জার ঘরে নাহি পাঅ
সাঁপ দিয়া পুড়ান ভুবন।।

* * *

বেদ করে উচ্চারণ  বের‌্যাঅ অগ্নি ঘনে ঘন
দেখিয়া সভাই কম্পমান
মনেত পাইআ মন্ম  সভে বোলে রাখ ধম্ম
তোমা বিনে কে করে পরিত্তান

************