পরবর্তীকালে কিছু কিছু হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করলেও পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ মুসলমান যে বৌদ্ধ বংশজাত তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বাংলার বৌদ্ধ ও নাথ পন্থীদের প্রধান উপাস্য ছিল শূন্যমূর্ত্তি নিরঞ্জন। কানুপা তাঁর দোহায় বলেছেন-
“লোঅহ গবব সমুঝব্বহই হউ পরমথে পবীন।
কোড়িহ মঙেঝ এক্কুজই হোই নিরংজন লীন।”
অর্থাৎ- লোকগর্ব বয়ে বেড়ায় যে আমি পরমার্থে প্রবীণ।
কোটির মধ্যে একজন যদি নিরঞ্জনে লীন হয়।
প্রাচীন মুসলমান লেখকেরা কেহই ঈশ্বর বা ভগবান আল্লাহের প্রতিশব্দ রূপে ব্যবহার করেননি। কিন্তু তাঁরা নিরঞ্জন শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এটি বৌদ্ধ উৎপত্তির একটি বলবৎ প্রমাণ। ইসলাম জাত পাত মানে না। মানুষ মাত্রেই আদমের সন্তান এবং সমান। কুরআনের বাণী “ইন্না আকরামাকুম ইন্দাল্লাহি আতক্বাকুম" নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে যে সকলের চেয়ে বেশি ধার্ম্মিক, সেই আল্লাহের নিকট সকলের চেয়ে বেশি সম্মানিত। কাজেই আমরা বংশ দেখি না, আমরা দেখি গুণ। বাংলার মুসলমান যদি গুণে শ্রেষ্ঠ হতে পারে, তবে আরব, পারস্য, তুকী, হিন্দুস্থান প্রভৃতি পৃথিবীর যে কোন মুসলমানের চেয়ে সে কেন নিকৃষ্ট হবে? কবি হাফিজ কেমন সুন্দর বলেছেন-
“তাজে শাহী তলবী গওহরে যাতী বু-নামা।
ওয়ার খোদ আয় তুখ্মাএ চম্শীদ ও ফরীর্দু বাশী।”
অর্থাৎ- রাজার মুকুট চাও যদি নিজ গুণের প্রকাশ কর।
হও ফরীদুন জমশীদের বা যদি বংশধরও।