পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১১৯

(ছ) খাদ্যশস্যের ব্যবসা সরকারের হাতে একচেটিয়া থাকা উচিত। পাট ব্যবসা ও বুনানীর লাইসেন্স রহিত করিতে হইবে।

(জ) সকল রকমের সমবায় সমিতিগুলিকে সাহায্য ও উৎসাহ দিতে হইবে।

 ৬। কালে সমস্ত ভূমিকে রাষ্ট্রের জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত করিতে হইবে এবং সরকারের অধিনায়কত্ব ও তত্ত্বাবধানে যৌথ ও সমবায় কৃষিপ্রথা খুলিতে হইবে।

 দেশীয় শিল্পকে নানা বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে মূল দাবীতে নিম্নলিখিত কর্মসূচীর উল্লেখ করা হয়ঃ

 ১। প্রাথমিক শিল্পগুলিকে জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত করিতে হইবে যেমনঃ যুদ্ধ শিল্প, ব্যাঙ্ক, বীমা, যানবাহন, বিদ্যুৎ সরবরাহ, খনি, বন-জঙ্গল ইত্যাদি; এবং অন্যান্য ছোটখাটো শিল্পগুলিকে পরিকল্পনার ভিতর দিয়া সরাসরি রাষ্ট্রের তত্ত্ববধানে আনিতে হইবে।

 ২। পাট ও চা শিল্পকে জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত হইবে এবং পাট ও চা ব্যবসা সরকারের হাতে একচেটিয়া থাকিবে।

 ৩। কুটির শিল্পগুলিকে সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিতর দিয়া বিশেষভাবে সাহায্য ও উৎসাহ দান করিতে হইবে।

 ৪। বিল, হাওর ও নদীর উপর হইতে কায়েমী স্বার্থ তুলিয়া দিয়া সরকারের কর্তৃত্বাধীনে মৎস্যজীবীদের মাঝে যৌথ উপায়ে বণ্টন করিয়া দিতে হবে এবং সুপরিকল্পিত পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৎস্যের চাষ ও মৎস্য ব্যবসার পত্তন করিতে হইবে। ফিশারী বিভাগের দ্রুত উন্নয়ন করিয়া এই সমস্ত বিষয়ে শিক্ষা প্রসার করিতে হইবে ও উন্নত ধরনের গবেষণাগার খুলিতে হইবে।

 ৫। শিল্প ও ব্যবসায়ে ব্যক্তিগত একচেটিয়া অধিকার থাকিবে না।

 ৬। বৃটিশের নিকট হইতে স্টার্লিং পাওনা অবিলম্বে আদায় করিতে হইবে এবং তাহা দ্বারা যন্ত্রপাতি ক্রয় করিতে হইবে ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিতে হইবে।

 ৭। দেশের আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করিবার ভার রাষ্ট্রকে গ্রহণ করিতে হইবে।

 ৮। সমস্ত বৃটিশ ও বৈদেশিক ব্যবসাকে জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত করিতে হইবে।

 ৯। শিল্পে বৈদেশিক মূলধন খাটানো বন্ধ করিতে হইবে।

 ১০। শিল্পে মুনাফা হার আইন করিয়া বাঁধিয়া দিতে হইবে।

 মানবতার চূড়ান্ত মুক্তি সংগ্রাম যাতে বিলম্বিত না হয়, সেজন্য জনতাকে তাহাদের সমস্ত ব্যক্তিগত এবং দলগত বিভেদ বিসর্জন দিয়া এক কাতারে সমবেত হইতে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন আবেদন জানাইতেছে। সাম্রাজ্যবাদী সরীসৃপের ফোঁসফোঁস শব্দ আজ সমাজের আনাচে-কানাচে সর্বত্র শোনা যাইতেছে- সেই ফোঁসফোঁস শব্দই যেন এই যুগের সঙ্গীত। আমাদের কওমী প্রতিষ্ঠান এই সরীসৃপদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া তাহাদের বিষদাঁত উৎপাটন করিতে বদ্ধপরিকর। হজরত আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ) বলিয়াছিলেন: “যদি আমি ঠিক থাকি, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আর যদি আমি ভ্রান্ত হই, আমাকে সংশোধন কর।’ সেই অমর আদর্শকেই সামনে ধরিয়াই কওমী প্রতিষ্ঠান সমস্ত দেশবাসীকে সমতালে আগাইয়া আসিতে আহবান জানাইতেছে; আসুন আমরা কোটি কোটি নর-নারীর সমবেত চেষ্টায় গণ-আজাদ হাসিল করিয়া সোনার পূর্ব পাকিস্তানকে সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে গড়িয়া তুলি।