পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৬৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১৪৩
শিরোনাম সূত্র তারিখ
হাজং বিদ্রোহের ওপর সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও সরকারী প্রেস নোট পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতিঃ বদরুদ্দীন উমর ফেব্রুয়ারী- মার্চ, ১৯৪৯

 ৪ঠা ফেব্রুয়ারীতে লেঙ্গুরা হাটের সামনে যে কৃষক-সিপাহী সংঘর্ষ হয় সে বিষয়ে ময়মনসিংহ থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারী প্রেরিত দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত নিম্নলিখিত বিবরণটি এদিক থেকে উল্লেখযোগ্যঃ

জানা গিয়াছে যে, গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী মোমেনশাহী জেলার আসাম-পূর্ব্ববঙ্গ সীমান্তবর্তী এলাকাবাসী হাজং ও আদিবাসীগণ লাঠি, তীর, ধনুক, বর্শা ও রামদা লইয়া লেঙ্গুরাস্থিত পুলিশ ক্যাম্প আক্রমণ করে। হাজংদের মধ্যে কম্যুনিষ্ট প্রভাব বলিয়া প্রকাশ। তাহারা দুই দলে বিভক্ত হইয়া পুলিশদিগকে আক্রমণ করে, কিন্তু পুলিশের পাল্টা আক্রমণ ও গুলি চালনার ফলে হটিয়া যায়। গুলিবর্ষণের ফলে ১০ জন হাজং নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হইয়াছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী প্রেরণ করা হয় এবং অবস্থা আয়ত্তাধীন আসিয়াছে বলিয়া প্রকাশ।
পুলিশ হাজংদের কয়েকটি গ্রামে হানা দিয়া ২৮ জনকে গ্রেফতার করিয়াছে এবং বহু তীর, ধনুক ও বর্শা উদ্ধার করিয়াছে। জানা গিয়াছে যে, হাজংরা কিছুকাল যাবৎ সরকারের টঙ্ক ও কর সংগ্রহ পরিচালনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিয়া আসিতেছে। ‘টঙ্ক’ ব্যবস্থা অনুসারে নগদ টাকার পরিবর্তে উৎপন্ন শস্যের একটি নিদিষ্ট অংশ জমিদারগণকে দিতে হয়।
প্রকাশ যে, গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ঘটনার পূর্বে উক্ত একই এলাকার অন্তর্গত বালিগঞ্জে সীমান্ত বাহিনীর একজন সৈন্য নিহত হয়।

 ময়মনসিংহ থেকে ১২ই ফেব্রুয়ারী প্রেরিত এবং ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট ৯ই ফেব্রুয়ারী দুটি ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়ঃ

জানা গিয়াছে, গত ৯ই ফেব্রুয়ারী মোমেনশাহী জেলার পূর্ব পাক-আসাম সীমান্তবর্তী উত্তর এলাকার গারো হাজং কমিউনিষ্টগণ লাঠি, তীর, ধনুক, বর্শা ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া দুর্গাপুর থানার নিকটস্থ ‘সেঙ্গু’ এবং হালুয়াঘাট থানার উপকণ্ঠস্থ ‘পুলিশ ক্যাম্প’ আক্রমণ করিলে, পুলিশ বাহিনী। পাল্টা আক্রমণ করিয়া গুলি চালায়। ফলে, হালুয়াঘাট থানার নিকটস্থ ঘটনা কেন্দ্রে কমিউনিষ্ট পক্ষের ১ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। লেঙ্গুরাস্থ ঘটনা কেন্দ্রের হতাহতের খবর এখনও পাওয়া যায় নাই। প্রকাশ, পূর্ব প্রকাশিত সরকারের টঙ্ক ও খাদ্য সংগ্রহনীতির বিরুদ্ধাচারনই এই সমস্ত সংঘর্ষের মূল কারণ। আর এক খবরে প্রকাশ, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হালুয়াঘাট, নলিতাবাড়ী এবং শ্রীবর্দী থানাত্রয়ে ১৪৪ ধারা জারী করিয়াছেন। আরও প্রকাশ, অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী এবং ই, বি, রেজিমেণ্ট রাইফেলস্ উক্ত অঞ্চলে প্রেরণ করা হইয়াছে। বর্তমান অবস্থা কিয়ৎ পরিমাণে শান্ত।

 ময়মনসিংহের হাজং অঞ্চলে কৃষক-সিপাহী সংঘর্ষ এবং সিপাহীদের কৃষক নির্যাতন সম্পর্কে এই সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’, ‘হিন্দুস্তান ষ্ট্যাণ্ডার্ড ইত্যাদি পত্রিকায় মন্তব্যসহ কিছু কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সব সংবাদের প্রতিবাদ করে পূর্ব বাঙলা সরকার ১৬ই ফেব্রুয়ারী ময়মনসিংহের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিম্নলিখিত প্রেসনোট জারী করেনঃ

 গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী 'আনন্দবাজার পত্রিকা’ ও ‘হিন্দুস্তান ষ্ট্যাণ্ডার্ড’-এ প্রকাশিত ইউনাইটেড প্রেস অব ইণ্ডিয়ার একটি খবরের প্রতি পূর্ববঙ্গ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইয়াছে। মোমেনশাহী জেলার আংশিক বহির্ভূত এলাকায় সাম্প্রতিক গোলযোগ সম্পর্কে উক্ত সংবাদ মিথ্যা বিবরণ দেওয়া হইয়াছে। উহাতে বলা হইয়াছে।