পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১৪৮

দান অবশ্য প্রচুর। নিজস্ব শক্তি সৌন্দয্য এবং সাবলীলতার কল্যাণেই উর্দু ভারতবর্ষের নানা প্রদেশে এতটা প্রসার লাভ করেছিল।

 মুসলিম হুকুমাতের মারকাজ দিল্লীর সামরিক ছাউনীতেই উর্দুর পয়দায়েশ। রাজনীতিক কারণে বেচারা উর্দুকে আজ জন্মভূমি হতে হিজরত করে আসতে হয়েছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের নানা প্রদেশে উর্দু অবশ্য অপরিচিত নহে। বর্ণমালা ও ইসলামী অবধারার কল্যাণে এবং নিজস্ব শক্তি ও সৌন্দর্য্যের দওলতে উর্দু মুসলমানদের নিকট খুবই আদরণীয়।

 মাগরেবী পাকিস্তানের বাসিন্দাগণের নিকট উর্দুর মকবুলিয়াৎ সম্বন্ধে সন্দেহের অবসর নাই। মাশরেকী পাকিস্তানেরও উর্দুর কদরদামী ব্যাপক। মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দু শব্দ সম্পাদকে বলতে গেলে খালাতো ভাই। মাশরেকী পাকিস্তানের মুসলমান সমাজে নিত্য প্রচলিত শব্দসমূহের শতকরা ৬০-৭০টি শব্দ উর্দু ভাষাতেও প্রচলিত বলে আমার বিশ্বাস। সাহিত্যিক বাংলার কথা অবশ্য আলাহিদা। তথাকথিত সাহিত্যিক বাংলা মাশরেকী পাকিস্তানের সাধারণ মাতৃভাষা নহে তাহা অবশ্যই স্বীকার্য। মোকামী জবান এবং আদাবী জবানের পার্থক্য সকল দেশেই বর্তমান। মোকামী জবানই আসলের মাদেরী জবান।

 মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দুর আসল পার্থক্য লিখন প্রণালীতে। মাশরেকী পাকিস্তানের বাংলা জবানের লিখনরীতি পরিবর্তনের কথা উঠছে। আরবী হরফে লিখিত হলে মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দুর বর্তমান পাথক্য কালক্রমে বিলোপ পাওয়া বিচিত্র নহে। পাকিস্তানের কল্যাণে আমাদের জীবন অনেক কিছু পরিবর্তন এসেছে এবং আরও আসবে। রাজনৈতিক আবর্তন বিবর্তনের সহিত ভাষার আবর্তন বিবর্তন বিশেষভাবে বিজড়িত। ভাব প্রকাশের জন্যই ভাষা। ভাবধারার পরিবর্তনের সংগে সংগে ভাষার পরিবর্তনও অবশ্যাম্ভাবী। মুসলিম জাতীয়তা ভৌগোলিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নহে। ভৌগোলিক জাতীয়তার সহিত ইসলামী জাতীয়তার মৌলিক মোখলেকাৎ ভৌগোলিক ব্যবধান যাহাই হোক না কেন, সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানদের এক খোদা, এক নবী, এক মযহাব, এক মিল্লাত, একই তাহজীব-তমাদ্দুন। সুতরাং ভৌগোলিক ব্যবধানে মুসলিম মিল্লাতের সত্যিকার ভাবধারা বিভিন্নমুখী হতে পারে না। যেহেতু ভাবধারার উৎস এক, ভাবের বাহন ভাষাও মোটামুটি এক-কেন্দ্রিক হওয়াই স্বাভাবিক।

 আগেই বলেছি রাষ্ট্র-ভাষার নাম দেশ বা জাতির নামানুসারেই হয়ে থাকে। এবং হওয়াও সংগত। পাকিস্তানের রাষ্ট্র-ভাষার স্বাভাবিক নাম “পাকিস্তানী”। উর্দু নাম বদল করে পাকিস্তানের রাষ্ট্র-ভাষাকে “পাকিস্তানী” বলাই আমার মতে সঙ্গত। পাকিস্তানী গৃহীত হলে আমার বিশ্বাস মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দু Ultimate fusion-এর পথ অধিতর প্রশস্ত হবে। মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দু সমবায়ে গঠিত হবে Common Script-এ লেখা পাকিস্তানী। মাশরেকী ও মাগরেবী পাকিস্তানের জবানী সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান এই পথে।

 স্বাভাবিকভাবেই সওয়াল হতে পারে উর্দু যখন হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা তখন উহার নাম বদলের দরকার কি? দরকার রয়েছে। পাকিস্তানের সবচেয়ে সমুন্নত ভাষা উর্দু এবং বাংলা অন্য কোন প্রাদেশিক ভাষা বাংলার ন্যায় একটা বিকশিত নহে। মাশরেকী পাকিস্তানের মুসলমানী বাংলার সহিত উর্দুর সামঞ্জস্যের কথা বলেছি। পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার নাম পাকিস্তানী রাখা হলে মাশরেকী ও মাগরেবী পাকিস্তানের ভাষাগত সমন্বয়ের পথ সহজ ও কোশাদা হবে। পাকিস্তানী কথাটায় পাকিস্তানের বাশিন্দাগণের প্রাণে যতটা অনুপ্রেরণার সঞ্চার করবে অন্য কোন নামে তাহা সম্ভবপর নহে। অনুপ্রেরণার কথাটা বিশেষভাবে কারেলে কদর।

 নাম পরিবর্তনের উর্দুর অন্তর্নিহিত ও সাবলীলতা ব্যাহত হবে না। আবশ্যক সংস্কার এবং পরিবর্তনের পর মাশরেকী পাকিস্তানের বাংলা ভাষার নাম পরিবর্তনেরও কথা উঠেছে। মুসলমানী বাংলার নাম পরিবর্তন করে