শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের যৌথ বিবৃতি | পূর্ব বাংলার ভাষার আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতিঃ বদরুদ্দীন উমর | ফেব্রুয়ারী, ১৯৫০ |
পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকগণের নিকট আবেদন
ভ্রাতৃগণ,
আল্লাহ তা'আলার অসীম অনুগ্রহে দুইশত বৎসরের গোলামীর পরে আমরা আজাদী লাভ করিয়াছি। এই আজাদী জিহাদের প্রধান সেনানী কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মরহুম আমাদিগকে বলিয়াছেন, “আমি পাকিস্তানের ভিত্তি পত্তন করিলাম, তোমরা পাকিস্তানের নাগরিকগণ ইহার উপর ইমারত গঠন করিবে”। এই গঠন কার্য্যের জন্য অত্যাবশ্যক দেশে শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষির সমুন্নতি সাধন। ইহার জন্য সর্বাগে প্রয়োজন দেশের শান্তির আবহাওয়া সৃষ্টি করা। কিন্তু গভীর দুঃখের বিষয় পশ্চিম বঙ্গে কতিপয় স্থানে বিশেষত কলিকাতায় সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার কারণে অথবা অন্য যে কনে কারণেই হউক আমাদের এই সুন্দর শান্তিপূর্ণ পূর্ব বাঙ্গালাতেও অশান্তি দেখা দিয়েছে। পশ্চিম বঙ্গের সংখ্যালঘুদের প্রতি উৎপীড়ন যেমন আমরা ঘৃণা করি, পূর্ব্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের প্রতি উৎপীড়ন আমরা সেইরূপই ঘৃণা করি। আমাদের মহামান্য কায়েদে আজম মরহুম, পাকিস্তানের বড় লাট মাননীয় জনাব খাজা নাজিমুদ্দিন, প্রধান মন্ত্রী মাননীয় জনাব লিয়াকত আলী খান, পূর্ববঙ্গের প্রধান মন্ত্রী মাননীয় জনাব নূরুল আমীন, পূর্ব পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মৌলানা আতাহার আলী প্রভৃতি গণ্যমান্য মহোদয়গণ অন্য রাষ্ট্রের মুসলমানগণের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রতিশোধ আমাদের রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু নিঃসহায় শান্ত জনগনের উপর লওয়ার প্রবৃত্তিকে একবাক্যে নিন্দা করিয়াছেন। আমরা আমাদের মুসলমান ভাইগণকে সবিনয়ে দৃঢ়ভাবে বলিব যে, এই প্রকার কার্য্যের দ্বারা পরোক্ষভাবে ও অজ্ঞাতসারে তাঁহারা ভারতের ৪ (চারি) কোটি মুসলমানের ধনপ্রান বিপন্ন করিয়া তুলিতেছেন এবং পাকিস্তানের অশেষ ক্ষতি সাধন করিতেছেন। এ প্রকার কার্য্যের ফলে আকস্মিক লোক বিনিময়ে রাষ্ট্রের উপর এমন চাপ পড়িবে যে, তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো ভাঙ্গি পড়িবে। উচ্ছৃংখল কার্যকলাপের ফলে, শিল্প-বাণিজ্য এবং স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ হইয়া উভয় রাষ্ট্রই অচল হইয়া পড়িবে যার ফলে আমাদের এই সাধের আজাদী বিপন্ন হইবে।
আল্লাহতা'আলা ধর্মবিশ্বাসী মুমনিগণকে বলিতেছেন, “ওহে ধর্ম্মবিশ্বাসী মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কথা মান, রসুলের, এবং তোমাদের মধ্যে আজ্ঞাদাতা নেতাদের কথা মান”। (কুরআন, সুরা নিসা, রুকু ৮)। আল্লাহ তা'আলা বলিতেছেন, “যে ব্যক্তি হত্যাকারী কিংবা পৃথিবীতে উৎপাতকারী ভিন্ন অন্য কোনও প্রাণকে হত্যা করে, সে যেন সমস্ত মনুষ্য জাতিকে হত্যা করে”। (কুরআন মাইদাঃ রুকু ৫)। হজরত রসূলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “উৎপীড়িত (মজলুম) যদিও বিধর্মী হয়, তাহার আর্তনাদ হইতে সাবধান হও”। তিনি আরও বলিয়াছেন, “যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে (মুসলমান রাজ্যের অমুসলমানকে) কষ্ট দেয়, সে নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট দেয়”।
পাকিস্তানের প্রত্যেক মুসলমানের মনে রাখা উচিৎ যে কলিকাতা বা হিন্দুস্তানের কোন অংশে হিন্দুদের দ্বারা অনুষ্ঠিত কোন অন্যায়ের জন্য এদেশের হিন্দুদের কিছুতেই দায়ী করা চলে না। মুসলমনাদের ন্যায় তাহারাও স্বাধীন পাকিস্তানের নাগরিক এবং পাকিস্তান সরকার যখন তাহাদের নাগরিক বলিয়া স্বীকার করিয়াছে তখন জান-মালের নিরাপত্তার জন্য মুসলমানদের ন্যায় তাহাদেরও রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ দাবী আছে। একথা প্রত্যেক