পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
২০৮

বঞ্চিত। নিজেদের জীবনকে সুখী ও সুন্দর করিয়া গড়িয়া তোলার কোন পথই তাহাদের সম্মুখে নাই। এক মুঠা পেটের ভাতের জন্য সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনী, চাকুরীর আশায় এদিক-ওদিক ছুটাছুটি, পরের বাড়ীর গোলামী এবং অকালে মৃত্যু, ইহাই আজ পাকিস্তানের গ্রাম্য-যুবশক্তির ভাগ্য। আমাদের অবস্থা উন্নত করার কোন চেষ্টাই বর্তমান সরকারের নাই। অর্থনৈতিক শোষণে, শিক্ষার অভাবে দেশের প্রাণ এই গ্রাম্য-যুবশক্তি দিনদিন হীনবল হইয়া পড়িতেছে। আমরা আশায় বুক বধিয়া পাকিস্তানের জন্য লড়িয়াছিলাম- জমি পাইব, শিক্ষা পাইব; কিন্তু বর্তমান মুসলিম লীগ সরকারের কল্যাণে আমাদের কৃষক যুবশক্তির সেই আশায় ছাই পড়িয়াছে।

শ্রমিক যুবক

 আমরা যুবসমাজের যে অংশ রেলে কাজ করিয়া, চট্টগ্রাম ডকে গতর খাটিয়া, সূতাকল চালাইয়া, রিকশা চালাইয়া বা অনুরূপ কঠোর পরিশ্রম করিয়া দিন-মজুর হিসাবে জীবিকা অর্জন করি- আমরা সেই যুবসমাজ আশা করিয়াছিলাম যে পাকিস্তানে আমরা জীবন-ধারণের উপযুক্ত মজুরী পাইব, পাইব চাকুরীর স্থায়িত্ব এবং শিক্ষা। কিন্তু বাস্তব জীবনে আমাদের আসল মজুরী কমিতেছে, খাটুনি বাড়িতেছে। শিক্ষার ব্যবস্থা নাই। বেকারী ও ছাঁটাইয়ের বিভীষিকা আমাদের সম্মুখে। অথচ আমাদিগকে শোষণ করিয়াই মুষ্টিমেয় ধনিক টাকার পাহাড় জমাইতেছে।

মধ্যবিত্ত যুবক

 আমরা মধ্যবিত্ত যুবসমাজ স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম- পাকিস্তানে আমরা চাকুরী পাইব, ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের সুযোগ পাইব, গৃহ পাইব, পাইব উন্নত সংস্কৃতি ও উন্নততর জীবন-ধারনের মান। কিন্তু বাস্তবতার নিষ্ঠুর আঘাতে সে স্বপ্ন আমাদের ভাঙ্গিয়া গিয়াছে অভাবের তাড়নায় আমরা জর্জরিত, শহরের বাসস্থানের অভাব আমাদের এক বিরাট সমস্যা। তদুপরি আজ আমরা ১৫ লক্ষের বেশী বেকার এক মুঠা ভাতের জন্য এখানে সেখানে ধর্ণা দিতেছি, আত্মহত্যা পর্যন্ত করিতেছি।

মোহাজের যুবক

 আমরা, মোহাজের যুবকেরা, পাকিস্তানের জন্য আমাদের সর্বস্ব হারাইয়াছি। কিন্তু আজ পাকিস্তানে আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নাই। সরকার আমাদিগকে কেবল মৌখিক সহানুভূতি এবং খবরের কাগজের মারফৎ সাহায্য করিতেছেন। কিন্তু আমাদের পুনর্বসতি ও পুনজীবন-যাত্রার কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থাই তাহারা করেন নাই। আত্মহত্যা পর্য্যন্তও করিতে হইতেছে।

নারী যুব-সমাজ

 আমরা নারী যুব-সমাজ আশা করিয়াছিলাম যে পাকিস্তানের সরকার আইন করিয়া আমাদিগকে সামাজিক অত্যাচার হইতে মুক্তি দিবেন, শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করিবেন এবং দিবেন জীবনের প্রতিক্ষেত্রে পুরুষের সহিত সমান মর্যাদা ও অধিকার। কিন্তু আজও আমরা নিগৃহীতা এবং শিক্ষা ও সভ্যতার সামান্যতম অংশ হইতেও বঞ্চিতা। আমরা গভীর লজ্জার সহিত লক্ষ্য করিতেছি যে, পাকিস্তান হওয়ার পর আট বছর অতীত হইতে চলিল, দেশের সমগ্র যুবসমাজের অর্ধেক এই নারী-যুবশক্তির শতকরা একজনও লিখিতে-পড়িতে পারে না। তদুপরি সিলেট মেয়ে কলেজ ও কামরুন্নেসা মেয়ে কলেজ, ইডেন স্কুল, বরিশালের একমাত্র ছাত্রী নিবাস, জগন্নাথ কলেজে মেয়েদের অধ্যয়নের ব্যবস্থা তুলিয়া দিয়া নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে সরকার এক বিরাট অভিযান চালাইতেছে। অথচ আলবেনিয়ার ন্যায় মুসলিম রাষ্ট্রের ১৯৪৫ সনে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন হওয়ায় ১৯৪৬ সালের শেষে একমাত্র পেশার জেলায় শতকরা ৭৫ জনের নিরক্ষরতা দূর হইয়া যায়। স্কুটারী জেলায় ১৯৪৬-এর মাঝামাঝি ২৩,০০০ মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়িতে আসে। এই রূপে বিভিন্ন