পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
২০৯

স্বাধীন দেশে আমাদের বোনেরা যখন শিক্ষাদীক্ষার উন্নত হইয়া দেশের ও সমাজের উন্নতির কাজে আত্মনিয়োগ

অর্থনৈতিক সংকট

 পূর্ববঙ্গ তথা পাকিস্তানের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হইতেছে কৃষি। পাকিস্তানের শতকরা ৯২ জন অধিবাসীই কৃষক। যে পাট তাহারা গড়ে ৩০ টাকা দরে বিক্রয় করিতে তাহা আজ ১২ টাকায়, যে সুপারি গড়ে ৭৫ টাকা দরে বিক্রয় করিত তাহা আজ ১০ টাকা দরে বিক্রয় করিতে বাধ্য হইতেছে। তদুপরি সুপারির উপর প্রতি মণে ১০ টাকা। /০ আনা শুল্ক ধার্য হওয়ায় সুপারি বিক্রয়ই হয় না। এভাবে পাকিস্তানের অধিবাসীদের নগদ আয়ের পথ হইতেছে। বিগত কয় বছরে দ্রব্যমূল্য মানের সূচকসংখ্যা (ওহফবী হসনবৎ) হইতে এই তথ্য সহজেই জানা যায়।

 ১৯৩৯ সনে দ্রব্যের গড়পড়তা মূল্য ছিল ১০০


 ১৯৪৮ সনে দ্রব্যের গড়পড়তা মুল্য ছিল ৩৭৪ পাকিস্তান পার্লামেণ্টে প্রদত্ত

 ১৯৪৯ সদে দ্রব্যের গড়পড়তা মূল্য ছিল ২১৪ অর্থমন্ত্রীর বস্তৃতা হইতে


 আজ একদিকে পাট, সুপারি, তামাকের দাম দ্রুত কমিয়া কৃষকের আয় ভয়ানকভাবে হ্রাস পাওয়ায় ও অপরদিকে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পাকিস্তানের অধিবাসীগণ আজ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি

 আমরা পাকিস্তানের যুবসমাজ আশা করিয়াছিলাম যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে সরকার সমস্ত দেশে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার প্রচলন করিয়া বৃটিশ আমলের কুশিক্ষা ও অজ্ঞতা দূর করিবেন কিন্তু তার পরিবর্ত্তে আজও দেশে শিক্ষিতের হার শতকরা ১১ জন। প্রাইমারী স্কুল বাড়াইবার পরিবর্ত্তে সরকার শতকরা ৪০ হইতে ৫০ ভাগ স্কুল- এক মাত্র চট্টগ্রাম জেলায় ৮৪৪টি, নাটোরে ৪০০টি- উঠাইয়া দিয়া শিক্ষাব্যবস্থার সংকোচ করিতেছেন। সরকার আজ শিক্ষা খাতে ৫.৬ ভাগ ব্যয় বরাদ্দ করিয়া যুদ্ধ খাতে দেশের সম্পদের শতকরা ৭২ ভাগ ব্যয় করিতেছেন।

 তদুপরি সরকার পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের মাতৃভাষার দাবীকে উপেক্ষা করিয়া আমাদের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করিতেছেন। বিশেষত অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে পাকিস্তানের শতকরা ৬২ জনের মাতৃভাষা বাংলা ভাষার দাবীকে উপেক্ষা করিয়া উর্দু চাপাইতেছে এবং আরবী হরফে বাংলা শিখার উদ্ভট পরিকল্পনাকে কার্য্যে পরিণত করার জন্য অজস্র অর্থের অপচয় করিতেছেন। আমরা বিশ্বাস করি উর্দু ও বাংলা একত্রে রাষ্ট্রভাষা হইলে পাকিস্তান দুবর্বল হইবে না। এবং আমরা আরও বিশ্বাস করি যে আরবী হরফে বাংলা লিখার ব্যবস্থাকে আমাদের উপর চাপাইয়া দিলে আমরা দেশের যুবক সমাজ চিরদিনের জন্য অজ্ঞতা ও অশিক্ষার অন্ধকার ডুবিয়া যাইব; আমাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি পথ রুদ্ধ হইবে।

স্বাস্থ্য

 আমরা দেখিতে পাইতেছি যে বর্ত্তমান সরকার দেশের যুবসমাজের স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য কোন ব্যবস্থাই অবলম্বন করেন নাই, যুবসমাজের জন্য ব্যায়মাগার, ক্লাব, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার খাতে টাকা খরচ না করিয়া মিলিটারী, পুলিশ ও বিদেশ ভ্রমণে বিপুল অর্থ ব্যয় করিতেছেন। কুখাদ্য ও ভেজাল খাদ্য খাইয়া এবং কঠোর