পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
২১৬

 জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেব কলিকাতা এবং ঢাকার প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরীর সহিত সংশ্লিষ্ট আছেন। সেই লাইব্রেরী হইতে নাকি পাক্ষিক পত্র “কাজের কথা’ বাহির হইবে। এই সব কর্ম-তৎপরতার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি, বুঝা যাইতেছে না। একটা খামখেয়ালীর ভাব সর্বত্র বিরাজমান। উপরের উদ্ধৃত ইংরেজী অংশগুলির ভাষা, শব্দ-বিন্যাস এবং ব্যাকরণ রীতির মধ্যেও যথেষ্ট চন্দ্রালোকের ছাপ পড়িয়াছে। আবুল হাসানাৎ সাহেব বাংলা ব্যাকরণকে মানেন না বলিয়া ইংরাজী ব্যাকরণকেও বৃদ্ধাংগুলি দেখাইয়াছেন দেখিতেছি, প্রথম চিঠির শেষোক্ত প্যারাই তার প্রমাণ। তাঁর মত বিচক্ষণ ব্যক্তির নিকট হইতে আমরা অধিকতর শালীনতা আশা করি।

 এই প্রসংগে পূর্ব-পাক গভর্ণমেণ্টের নিকটও আমাদের আরজ, জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেবকে পুলিশের ডিআইজি, পদ হইতে অপসারিত করিয়া ভাষা সংস্কারে ও গণশিক্ষার ডি,আই,জি, পদে নিযুক্ত করুন। তাঁহার স্বাভাবিক প্রতিভা যখন এই দিকেই রহিয়াছে, তখন তাঁহাকে কেন অনর্থক ডি,আই,জি পদের গুরুদায়িত্ব দিয়ো আটক রাখা হয়? ইহার ফলে তাঁহার নিজের সরকারী কাজও তিনি ভালভাবে করিতে পারেন না। তবে গভর্ণমেণ্টের পলিসী যদি এমন হয় যে, এক পদে থাকিয়া অন্য পদের কাজ যিনি যত করিতে পরিবেন, তিনি ততই সুযোগ্য কর্ম্মচারী বলিয়া বিবেচিত হইবেন, তাহা হইলে আমাদের আর কোন আপত্তির কারণ রহিবে না। তখন শিক্ষাবিভাগের ডিরেক্টর হইবেন এমন ব্যক্তি যিনি লেখাপড়া জানেন না। শিক্ষা বিভাগের সেক্রেটারীর কাজ হইবে নাটক লেখা, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাজ হইবে সাহিত্য ও কাব্য লইয়া রসালাপ করা, ইনকামট্যাক্স অফিসারের কাজ হইবে মাসিক পত্র বাহির করা, আর পুলিশের কাজ হইবে ভাষা সংস্কার করা। সেই রূপ পাবলিসিটি ডিপার্টমেণ্টএর কাজ হইবে কোন কিছু পাবলিশ না করা। এরূপ হইরে আমাদের কিছুই বলিবার নাই।

 গভর্ণমেণ্টের নিকট আমরা জানিতে চাই জনাব আবুল হাসানাৎ সাহেবের এই সব কার্য্যের পশ্চাতে তাঁহাদের কোন সম্মতি (চেংসান) আছে কিনা। যদি থাকে, তবে নিশ্চয়ই আমরা জনাব হাসানাৎ সাহেবের নির্দেশ মানিয়া চলিব এবং অচিরেই ২-৪ জন কম্পোজিটার পাঠাইয়া দিব- যাহাতে নূতন হরফে ও বানান অনুযায়ী মাত্র তিন দিন কম্পোজিং শিখিয়া আসিয়াই নির্ভুলভাবে পুরাতন রীতি অনুসারেই তাহারা কম্পোজ করিতে পারে। কি অপূর্ব তেলেছমাৎ, কিন্তু আমাদের মনে হয়, কম্পোজিটারেরা ইহাতে রাজী হইবে না। ভুল বানান নির্ভুলভাবে শিখিবার ভুল তাহারা কেন করিবে?


* পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলা ভাষার উপর বিভিন্ন ধরনের আঘাত হানা হয়। ভাষাকে সরলীকরণ বা আরবী হরফে বাংলা পরিবর্তনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে। এখানে এই প্রচেষ্টাটিকে নমুনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।