পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
২৩০
শিরোনাম সূত্র তারিখ
একুশে ফেব্রুয়ারী: আন্দোলনের ঘটনাপঞ্জী একুশে ফেব্রুয়ারী (সংকলন) ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২

একুশের ইতিহাস

কবির উদ্দিন আহমদ

 বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে ১৯৪৮ সনে ঢাকার অগ্রণী ছাত্রসমাজ ও সংস্কৃতিবান বুদ্ধিজীবীরা প্রথম আওয়াজ তুলেছিল। তখন থেকেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। সেদিনও ছাত্র সমাজ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচণ্ড আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সরকারের চূড়ান্ত দমননীতি নেমে এসেছিল তাদের উপর। ছাত্র জনতার দুর্বার শক্তির সন্মুখে বিশ্বাসঘাতক নাজিমুদ্দিন সরকার বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। তিনি পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীকে স্বীকার করে প্রস্তাব পাশ করেছিলেন ও গণপরিষদের কাছে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা আন্দোলনে ধৃত সকল বন্দীদের মুক্তি দিয়ে এবং অন্যতম কর্মী ও নেতৃবৃন্দের উপর থেকে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা প্রত্যাহার করে ঢাকার অবাঞ্চিত পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়েছিলেন।

 ১৯৪৮ সনের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের পর প্রায় চার-চার বছর (১৯৫২) কেটে গেছে। কিন্তু রাষ্ট্রভাষার দাবীকে সম্পূর্ণ ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে, নাজিমুউদ্দিন সরকার তার নিজের প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করেছে। লীগ সরকারের এমনি বিশ্বাসঘাতকতাই জনসাধারণের মনে পুঞ্জীভূত অসন্তোষের সৃষ্টি করেছিল।

২৬শে জানুয়ারী

 পাকিস্তানের রাজনৈতিক আবর্তের প্রবাহচক্রে নাজিমুউদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন। ১৯৫২ সনে পূর্ববঙ্গ সফরকালে ২৬শে জানুয়ারী পল্টন, ময়দানে এক জনসভায় তিনি পুনরায় নির্লজ্জের মত “উর্দূই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হবে” বলে ঘোষণা করলেন। এই বক্তৃতা প্রদেশের অসন্তোষ-ভরা জনমনকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ঢাকায় এবং প্রদেশের সর্বত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। সভা-সমিতির মধ্য দিয়ে সংঘটিত প্রতিবাদ উঠতে লাগলো দিকে দিকে।

৩০শে জানুয়ারী

 নাজিমুদ্দিনের স্বৈরাচারী ঘোষণার প্রতিবাদে ঢাকার ছাত্র-সমাজ সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলবার সংকল্প গ্রহণ করলো। ৩০শে জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পূর্ণ ধর্মঘট ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র সভা করে রাষ্ট্রভাষা বাঙলার দাবীকে সামগ্রিক কণ্ঠে পুনরুত্থান করল। এই পুনরুত্থাপনের নেতৃত্ব গ্রহণ করল “বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্র-ভাষা কমিটি”। ১৯৪৮ সনের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের নির্যাতিত ছাত্র-কর্মীরা নাজিমুদ্দিনের বিশ্বাসঘাতকতার স্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরে ভাষা আন্দোলনকে জীইয়ে রাখার জন্যে জনাব আবদুল মতিনকে আহ্বায়ক করে “বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি” গঠন করে। এই রাষ্ট্রভাষা কমিটিই প্রতি বৎসর ১১ই মার্চ “রাষ্ট্রভাষা দিবস” উদযাপন করতে এবং এই কমিটিই ১৯৫২ সনের ভাষা আন্দোলনকে প্রথম সংগঠিত রূপ দেয়।

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ

 সেই ৩০শে জানুয়ারী বৈকালে বার লাইব্রেরী হলে ঢাকার ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিবিদ ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক নিযুক্ত করে একটি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠন করা হয়।