পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
২৩৬

 সরকার সারা প্রদেশের দাবীকে অস্বীকার করতে না পেরে এক ভূয়া তদন্ত কমিশন বসান। কিন্তু যেহেতু আন্দোলনের নেতাদের বন্দী করে রেখে সরকারী লোক দিয়েই সে কমিশন গঠিত হয়েছিল, সে জন্য সর্বদলীয় কর্মপরিষদ তা বর্জন করে। ভাষা আন্দোলন এমনি চূড়ান্ত সরকারী দমননীতি চাপে আপাততঃ স্তব্ধ হয়ে গেলেও প্রদেশের জনসাধারণ তাকে ভোলেনি। তার প্রমাণ ১৯৫৩ সনের ২১শে ফেব্রুয়ারী ঐতিহাসিক সাফল্য। সারা প্রদেশের মানুষ এই দিন শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে ১৯৫২ সনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসছে। ১৯৬৩ সনের ২১শে ফেব্রুয়ারী এবং তৎপরবর্তী গণ-আন্দোলনের ধারা তারই সাক্ষ্য বহন করে আসছে।

 ভাষা আন্দোলনের ধৃত সকল রাজবন্দীকে অবিলম্বে ছেড়ে দেবেন বলে সরকার কর্তৃক বার বার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, জনাব ওলী আহাদ, জনাব তোয়াহা, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও অধ্যাপক অজিত গুহকে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয়। একুশে ফেব্রুয়ারী ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জনসাধারণ তাদের শত্রু-গোষ্ঠীর চেহারা চিনে নিয়েছে। আর অমর বীর শহীদরা প্রত্যেকটি মানুষের মনে এক একটি স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে রয়েছে চিরকালের জন্য। এই স্মৃতিস্তম্ভই সকল প্রতিবন্ধকতার প্রচীর ধ্বংস করে নতুন জীবন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এদেশের মানুষের মনে দুর্জয় প্রেরণার সঞ্চার করে চলেছে।[১]


  1. মার্চ ১৯৫৩