পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
২৪০
শিরোনাম সূত্র তারিখ
আন্দোলনে সরকারী আচরণ সমর্থন করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য পাকিস্তান প্রচার বিভাগ ৩রা মার্চ, ১৯৫২

ভাষা আন্দোলনের অন্তরালে

নূরুল আমীন

 বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করার জন্য জনসাধারণের নিয়মতান্ত্রিক দাবী দমাইয়া রাখার প্রশ্নই উঠে না। ২১শে ফেব্রুয়ারীর মাত্র এক পক্ষকাল পূর্বে এই সম্পর্কে ঢাকায় এবং প্রদেশের অন্যান্য স্থানে সভা ও শোভাযাত্রা করা হয়; স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাহাতে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করেন নাই। কিন্তু রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি আসল প্রশ্ন নয়, ইহার পশ্চাতে সরকারকে বানচাল করার জন্য বিদেশী দালাল ও অন্যান্যদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র নিহিত আছে। আইন অমান্যের উদ্যোক্তাদের যদি ভাষার দাবী প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য উদ্দেশ্য না থাকিতে তবে ব্যবস্থা পরিষদে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য গণপরিষদের নিকট সুপারিশ করিয়া প্রস্তাব গৃহীত হওয়াতেই তাহারা সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হইত।

 কিন্তু আমরা কি দেখিলাম....।

 গত ৩রা মার্চ রাত্রে পাকিস্তান রেডিওর ঢাকা হইতে জনসাধারণের উদ্দেশে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী জনাব নূরুল আমীনের বেতার বক্তৃতাঃ

 দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ আপনাদের উদ্দেশে কয়েকটি কথা বলিতেছি। ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় যেসব ঘটনা ঘটিয়াছে, আমি অত্যন্ত ব্যথিত ও মর্মাহত হইয়াছি। আমি আপনাদেরই একজন, আপনারাই আমাকে একজন খাদেম হিসাবে আপনাদের খেদমত করার সুযোগ ও গৌরব দিয়াছেন। আমার বিবেকবুদ্ধি মতে আমার সাধ্যমত আপনাদের খেদমত করাই আমার কর্তব্য। এই কথা হয়তো না বলিলেও চলে যে, প্রত্যেক পাকিস্তানীর জীবন- সে ছাত্রই হউক বা অন্য অন্য কেউ হউক- আপনাদের কাছে যেমন প্রিয় আমার কাছে ঠিক তেমনি প্রিয়। প্রত্যেকটি পাকিস্তানীর জীবন পাকিস্তানের জাতীয় সম্পদ, তাই ঢাকায় দুর্ঘটনায় যে পাঁচজনের জীবন নাশ হইয়াছে তাহাতে আমি জাতীয় ও আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি বলিয়াই মনে করি। ঢাকার সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় যাহারা ভুক্তভোগী তাহাদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করিতেছি। আমি পূর্বেই বলিয়াছি যে, ঢাকার গুলী চালানো সংক্রান্ত ঘটনাবলী যথাসময়ে প্রকাশিত হইবে এবং এ সম্পর্কে কেহ দোষী সাব্যস্ত হইলে তাহার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইবে। যেহেতু অবস্থা ক্রমেই স্বাভাবিক হইয়া আসিতেছে এবং গত কয়দিনের ঘটনার স্থানে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হইয়াছিল তাহা ক্রমেই প্রকাশিত হইতেছে, এখন এ বিষয়ে ধীরস্থিরভাবে চিন্তা করিবার সময় আসিয়াছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে আমার আগের বক্তৃতায় আপনাদের কাছে অনেক কিছুই খুলিয়া বলিতে পারি নাই। এখন আরও কিছু তথ্য প্রকাশ করিতে চাই এবং তাহা হইতে আপনারা সহজেই বুঝিতে পারিবেন যে, সরকার এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হইয়াছিলেন যেখানে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা ছাড়া আর গত্যন্তর ছিল না। কম্যুনিষ্ট, বিদেশী চর এবং হতাশ রাজনৈতিকদের ধ্বংসাত্মক চক্রান্ত অংকুরেই বিনষ্ট হইয়াছে। এই চক্রান্তের পটভূমি, স্বরূপ এবং চক্রান্তকারীদের পন্থা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখন আপনাদিগকে অবগত করান আমার কর্তব্য। এ সমস্ত ব্যাপারে পর্দার আড়ালে থাকিয়া যে সকল শক্তি কাজ করিতেছিল তৎসম্পর্কে আমার পূর্ব বক্তৃতায় কিছু কিছু ইংগিত করিয়াছিলাম।