পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১৪

আছে। সে কারণ এই যে, এ-সাহিত্যের স্রষ্টাও মুসলমান নয়; এর স্পিরিটও মুসলমানী নয়; এর ভাষাও মুসলমানের ভাষা নয়। প্রথমঃ এ-সাহিত্যের স্পিরিটের কথাই ধরা যাক। এ-সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। ঠিকই তাঁরা করেছেন। নইলে ওটা জীবন্ত সাহিত্য হতো না- কিন্তু সত্যকথা এই যে, ঐ সাহিত্যকে মুসলমানেরা তাদের জাতীয় সাহিত্য মনে করে না। কারণ, ত্যাগ বৈরাগ্য ভক্তিপ্রেম যত উচুদরের আদর্শ হোক, মুসলমানের জীবনাদর্শ তা নয়। -সাহিত্যের স্পিরিট সম্বন্ধে যা বলেছি, বিষয়বস্তু সম্বন্ধেও তাই বলতে হয়। সাহিত্যের নায়ক-নায়িকা যদি আমরা না হলাম, সাহিত্যের পটভূমি যদি আমার কর্মভূমি না হলো, সাহিত্যের বাণী যদি আমার মর্মবাণী না হলো তবে সে সাহিত্য আমার সাহিত্য হয় কিরূপে? আমার ঐতিহ্য আমার ইতিহাস আমার ইতিকথা এবং আমার উপকথা যে সাহিত্যের উৎস নয়, সে-সাহিত্য আমার জীবন-উৎস হবে কেমন করে?... সব জাতীয় চেতনাই তার ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে। যতদিন সে ঐতিহ্যকে বুনিয়াদ করে সাহিত্য রচিত না হবে, ততদিন সে-সাহিত্য থেকে কোনো জাতি প্রেরণা পাবে না। একটা অতি আধুনিক নজীর দিচ্ছি। ইংরেজী সাহিত্য খুবই উন্নত ও সম্পদশালী সাহিত্য। ওটা মিলটন, শেক্সপিয়র, স্কট, শেলীর সাহিত্য। কিন্তু অত বড় সাহিত্যও আইরিশ জাতির প্রেরণা জাগাতে পারেনি। সুইফট, বার্কলে, গোল্ড স্মিথ ও বার্নার্ডশ’র মত অনেক প্রতিভাবান আইরিশ এই ইংরেজী সাহিত্যের সেবা করেছেন, বিশ্বজোড়া নামও করেছেন। কিন্তু তাদের সাহিত্যসেবা হয়েছে লণ্ডনে বসে-আয়র্লণ্ডের মাটিতে নয়। আয়লণ্ডবাসীর জাতীয় জীবনে সে সাহিত্য কোন স্পন্দন সৃষ্টিও করতে পারেনি। তাই পার্নলে, ড্যাভিট, রেড-মণ্ড প্রভৃতি রাষ্ট্রনেতার বিপুল ত্যাগ, কঠোর সাধনা কিছুই আইরিশ জাতির মুক্তি আন্দোলন সফল করতে পারেনি। অথচ যেদিন আয়র্লণ্ডের জাতীয় কবি ডব্লিউ বি, ইয়েটস ইংরেজী প্রভাবমুক্ত স্বাধীন আইরিশ সংস্কৃতির বুনিয়াদে নিজস্ব রূপদান করলেন, সেদিন আইরিশ গণ-মন নিজের হারানো ধন ফিরে পেল; নবজন্মের আনন্দে সে মেতে উঠলো; নিজের ভাগ্য-নির্মাণে সে কর্মোন্মত্ত হয়ে গেল, তার ফল হল এই যে, আইরিশ জাতির দু’শো বছরের ব্যর্থ স্বাধীনতা আন্দোলন ডিভেলেরার নেতৃত্বে কুড়ি বছরে জয়যুক্ত হলো।’