পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৩৭৫
শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুসলিম লীগবিরোধী যুক্তফ্রণ্টের প্রচার পুস্তিকা যুক্তফ্রণ্ট পার্টি ৪ঠা মার্চ, ১৯৫৪

জালেম-শাহীর ছয় বৎসর

প্রচার বিভাগ

যুক্তফ্রণ্ট কেন্দ্রীয় দফতর

 মুসলীম লীগের জাঁদরেল নেতা সরদার আবদুল রব নিশতার বলিয়াছেনঃ

 “মুসলিম লীগ এখন সরকারের আজ্ঞাবহ”

 কায়েদে আজম চাহিয়াছিলেন সরকারকে মুসলিম লীগের আজ্ঞাবহ করিতে। সববময় কর্তৃত্বসম্পন্ন সে মুসলিম লীগ মরিয়া গিয়াছে। এখন গোলাম লীগের সৃষ্টি হইয়াছে। সেই গোলাম এখন জালেমের ভূমিকা গ্রহণ করিয়া জনগণকে কিভাবে শাসনের নামে শোষণ ও দমন করিতেছে তাহা জানা প্রয়োজন, তাই আমরা মজলুম জনগণের হাতে মুসলিম লীগের জালিম-শাহীর ছয় বৎসর তুলিয়া দিলাম।

-যুক্তফ্রণ্ট প্রচার দফতর

 কায়েদে আজমের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সংগ্রাম করিয়া ভারতের দশ কোটি মুসলমান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। বিরাট ঐতিহ্যসম্পন্ন একটি মহান জাতির ধর্ম ও সংস্কৃতির হেফাজতের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য ছিল। কাজেই অতি স্বাভাবিকভাবেই নূতন রাষ্ট্রের মাধ্যমে সেই মহান জাতি পূর্ণ আজাদী লাভ করিবে বলিয়া আশা করা গিয়াছিল। কিন্তু আফসোসের বিষয়, জাতির পিতা কায়েদে আজমের এমেত্মকালের পর দেশের নেতৃত্বভার এমন ব্যক্তিদের হাতে চলিয়া গেল, যাহারা নেতা হওয়ার সম্পূর্ণ অযোগ্য। পাকিস্তান অর্জনের সংগ্রামে যাহারা অগ্রনায়ক ছিলেন, কায়েমী স্বার্থবাদীদের চক্রামেত্ম তাহারা রাজনৈতিক কর্ম্মক্ষেত্র হইতে অপসারিত হইলেন অথবা নানা প্রকার অত্যাচার ও নির্যাতন ভোগ করিয়া তাঁহাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া গেল এবং কলুষিত চরিত্র ব্যক্তিগণ, যাহাদের এই রাষ্ট্র গঠনে কোন প্রকার ত্যাগ ও পরিশ্রম স্বীকার করিতে হয় নাই, তাহারা রাষ্ট্রের কর্ণধাররূপে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হইলেন। ইহার স্বাভাবিক পরিণতিস্বরূপ পাকিস্তানের পুণ্যভূমি কলুষিত হইল এবং পাকিস্তানের কোটি কোটি জনগণের ভাগ্যে চরম বিপর্যয় দেখা দিল।

লীগ নেতৃত্বের স্বরূপ

 পাকিস্তানের বর্তমান নেতাগণের চরিত্র বিশ্লেষণ করিলে দেখা যাইবে যে ইহাদের পশ্চাতে কোন ত্যাগ নাই। জনগণের জন্য দরদ নাই এবং ইহাদের ধর্ম ও ঈমানের সঙ্গে তাহাদের অনুসৃত নীতি ও কার্যাবলীর কোন সম্পর্ক নাই। অথচ ইহারা দরিদ্র ও অশিক্ষিত দেশবাসীগণকে প্রতারিত করিবার জন্য মুখে ঘন ঘন ইসলামের নাম উচ্চারণ করিতেছেন, খলিফাদের সহিত নিজেদের তুলনার স্পর্ধা দেখাইতেছেন এবং ইহাদের কুকীর্তির সমালোচনা করিলে সমালোচকদের ইহারা রাষ্ট্রদ্রোহী, কমুনিষ্ট এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বলিয়া অভিহিত করিয়া নানা রকম বেআইনী আইনের কবলে ফেলিয়া তাহাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করিয়া দিতেছেন। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা বিশ্লেষণ করিলে দেখা যাইবে যে, ইহারা ইসলামকে পাকিস্তান হইতে নির্বাসিত করিতে বদ্ধপরিকর। ঈমানের নাম করিয়া ইহারা বে-ঈমানীর চরম পরাকাষ্ঠা দেখাইতেছে, জনগণকে মিথ্যা সেত্মাক দিয়া দুঃখ ভোগের প্ররণা দিতেছে, অথচ নিজেরা ভোগবিলাসে মত্ত থাকার প্রয়োজনে নানা অসদুপায়ে নিজেদের ধন-দৌলত বৃদ্ধি করিয়া কিসমৎ ফিরাইতেছে।