পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৩৭৬

জাল মুসলিম লীগ

 মুসলিম লীগ পাকিস্তান আনয়ন করিয়াছে কিন্তু সেই মুসলিম লীগ আর বর্তমান মুসলিম লীগ সম্পূর্ণ পৃথক দুইটি প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান অর্জন করিয়াছিল নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কিন্তু পাকিস্তান অর্জনের পর সে মুসলিম লীগের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু লীগের নাম ভাঙ্গাইয়া যাহাতে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করা চলে এবং পাকিস্তানকে শাসন ও শোষণ করিবার কায়েমী স্বার্থ বজায় থাকে তজ্জন্য একদল স্বার্থপর, ক্ষমতালিপ্সু ও দুর্নীতিবাজ লোকের চেষ্টায় পাকিস্তান মুসলিম লীগের গোড়াপত্তন হয়। ইহারা মুসলিম লীগের পুরাতন গৌরবের উত্তরাধিকারী সাজিয়া নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের কাজে নির্লজ্জের মতো প্রচার করিতেছে যে, মুসলিম লীগ কায়েদে আজমের আমানতস্বরূপ এবং কায়েদে আজম ইহাদের হাতেই লীগকে আমানত রাখিয়া গিয়াছেন। জনসাধারণ ইহাদের ধাপ্পাবাজীতে গত বৎসর ধরিয়া প্রতারিত হইয়াছে। কায়েদে আজম ঈমান, একতা ও শৃঙ্খলা এই তিনটি মূলমন্ত্র আমাদিগকে দিয়া গিয়াছেন। কিন্তু তথাকথিত জাতীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ এই তিনটি মূলমন্ত্র অদ্ভুতভাবে তাহাদের কাজে লাগাইতেছে। তাহারা জনসাধারণকে শোষণ করিতেছে, প্রতিবাদ করিলে একতা ও শৃঙ্খলার দোহাই পাড়িতেছে।

 মুসলিম লীগের নামে বর্তমান শাসক সম্প্রদায় জনগণকে বিভ্রান্ত করার যে শ্রেষ্ঠতম কৌশল আবিষ্কার করিয়াছে, তাহাতে আমাদের ধর্ম ও সস্কৃতি বিপন্ন হইতে চলিয়াছে। আজ যদি ধর্ম্মের অবমাননাকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা আইনে থাকিত, তাহা হইলে বর্তমান রাষ্ট্রনেতাদের অনেককেই ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিতে অথবা কারাগারে পচিয়া মরিতে হইত। আল্লাহ ও ইসলামের নাম করিয়া ইহারা এমন কাজ করিয়া থাকে, যাহাতে আল্লার অবমাননা এবং ইসলামের অমর্যাদা করা হয় আমরা প্রথমে বর্তমান লীগের শাহীর ধর্ম্ম-বিরোধী কার্যকলাপের যে পরিচয় দান করিব, তাহাতে দেখা যাইবে যে ইহাদের হাতে শাসন ক্ষমতা থাকিলে পাকিস্তানে ইসলামী হুকুমত কোন কালে কায়েম হইবে না, এমনকি মুসলমান ধর্মের অস্তিত্ব ইহাদের দ্বারা বিপন্ন হইবে। ইহা বুঝিতে পারিয়াই মৌলনা আতাহার আলীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নায়িাছেন। জনদরদী শেরেবাংলা ও দেশপ্রেমিক ভাষানী মওলানা হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলাইয়াছেন। মুসলিম লীগ নেতাদের ইসলাম প্রীতির বিষয় লইয়া আলাপে আসিবার পূর্বে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে খলিফাদের সঙ্গে বর্তমান মুসলিম লীগ খলিফাদের জীবনযাত্রা প্রণালীর একটু তুলনামূলক আলোচনা করা যাক।

খলিফাদের ত্যাগ ও লীগের নেতাদের অর্থলোভ

 ইসলামী রাষ্ট্র অথবা খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় যে বেতন রাষ্ট্রনায়কেরা লইতেন, তাহার সহিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়কদের বেতনের এক তুলনামূলক হিসাব নিম্নে দেখানো হইলঃ

 ১ম ও দ্বিতীয় খলিফা হজরত আবুবকর ও হজরত আবুবকর ও হজরত ওমর (রাঃ) মাসিক ২২৫ দেরহাম বেতন লইতেন। তাঁহারা খলিফা কার্যভার গ্রহণের পূর্বে ব্যক্তিগত সম্পত্তির এক পূর্ণ তালিকা সরকারে পেশ কয়িয়াছিলেন। ইহার উদ্দেশ্য ছিল যে, খলিফার কার্যভার ত্যাগের পর তাঁহাদের সম্মত্তি নিজেদের পদাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধি করিয়াছেন কিনা, তাহা দেখাইবার সুযোগ জনসাধারণকে দান করা। তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রাঃ) সরকারী কোষাগার হইতে আদৌ কোন বেতন গ্রহণ করেন নাই। চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রাঃ) বৎসরে ৫শত দেরহাম বেতন গ্রহণ করিতেন।

কায়েদে আজমের পর

 পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্রপতি হিসাবে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সরকারী তহবিল হইতে কোন বেতন গ্রহণ করেন নাই।