পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৩৭৮

 স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রপতির বেতন ধার্য্য হয় ১২,৫০০ টাকা। প্রথম রাষ্ট্রপতি শ্রীরাজা গোপালচারী মাসিক ৭০০ টাকা রাষ্ট্র দান করিতেন, ২,৫০০ টাকা দরিদ্র ছাত্রদের তহবিলে দিতেন এবং নিজে লইতেন মাসিক ৩,০০০ টাকা।

 মাদ্রাজের প্রধানমন্ত্রী হইয়াও রাজ্য গোপালচারী এখনও রিকশা চড়িয়া বেড়ান। নাজিমদ্দিন ও রাজা গোপালচারীর মধ্যে পার্থক্য এই যে নাজিমুদ্দিন চিরকাল বৃটিশের দালালী করিয়াছেন। আর রাজাজী আজাদীর সংগ্রামে চিরকাল নির্যাতিত হইয়াছেন।

 বড় লাট হিসাবে বিদায়কালীন ভাতা পাইয়াছেন রাজা গোপালাচারী মাসিক ১,০০০ টাকা এবং নাজিমউদ্দিন মাসিক ২,০০০।

ইসলামী রাষ্ট্রে মদ ও জুয়া

 পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে পূর্ববঙ্গে যে পরিমাণ মদ বিক্রয় হইত, পাকিস্তান হওয়ার পর তাহা যে কতগুণ বাড়িয়া গিয়াছে, তাহার হিসাব করা যায় না। পাকিস্তান হওয়ার পূর্বে কেবলমাত্র ঢাকা ক্লাবে মাসে ৭০ হইতে ৮০ গ্যালন মদ বিক্রয় হইত। পাকিস্তান হওয়ার পর আইন করিয়া মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। অথচ এক ঢাকা ক্লাবেই মাসে ৭০০ গ্যালন মদ বিক্রয় হয়। ইহা ছাড়াও জনাব নূরুল আমীন সাহেবের মেহেরবানীতে ঢাকা শহরের বুকে আরও ৬টি মদের দোকান খোলা হইয়াছে এবং তাহাতেও বিপুল পরিমাণে মদ বিক্রয় হয়।

 ইসলামী আইন অনুসারে লাট সাহেবেরা খলিফাদের শামিল। অথচ সেই খলিফাদের বাসভবনে মদ মওজুদ রাখা নেহায়েত জরুরী ব্যাপার। অনেক সময় লাট প্রাসাদে কক্টেল্ পার্টি এবং মেয়েদের কোমর ধরিয়া নাচ (বল নাচ) হইয়া থাকে। ইসলামী বিধানের কোথাও এইরূপ কক্টেল্ পার্টি ও বল নাচের হদিস পাওয়া যায় নাই।

দেউলিয়া পাকিস্তান

 পাকিস্তান হওয়ার পর আমাদের আর্থিক অবস্থা ছিল, পরের কয়েক বৎসরে তাহার বিরূপ শোচনীয় হইয়াছে, অনেকেই তাহা অবগত নন। কাজেই তাহার হিসাব সংক্ষেপে দেওয়া প্রয়োজন।

 ১৯৪৮-৪৯ সালে পাকিস্তানের মওজুদ তহবিলে ১০৮ কোটি টাকার সোনা বাড়তি হইয়াছিল। কিন্তু ১৯৫০-৫১ সালে পাকিস্তানের দেনা হয় ৬৮ কোটি টাকা। বিদেশ হইতে বিলাতী মদ, নখের রং, মুখের পালিশ, ঠোঁটের রং এবং পুতুল কিনিতে রাষ্ট্রের তহবিল উজাড় করিয়া দেওয়া হয়। অথচ এই সকল জিনিষ গরীবের কোন কাজে লাগে না। বড়লোক এবং ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজের খেয়াল মিটাইবার জন্য গরীব দেশের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করিয়া দেশকে ফতুর করা হইয়াছে।

শাসনতন্ত্র কোথায়?

 পাকিস্তান কায়েম হইয়াছে প্রায় সাত বৎসর পূর্বে, কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এই রাষ্ট্রের কোন শাসনতন্ত্র রচিত হয় নাই। ইংরেজের গড়া শাসনতন্ত্র লইয়া এই রাষ্ট্র পরিচালিত হইতেছে, অথচ ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার মাত্র এক বৎসর পরেই তাহার নূতন শাসনতন্ত্র রচনা শেষ করিয়াছে। আমেরিকার মত একটি দেশের শাসনতন্ত্র রচনা করিতে মাত্র নয় মাস সময় লাগিয়াছে। ভারতের শাসনতন্ত্র রচনা এবং গৃহীত হইতে মোট ব্যয় হইয়াছে ৯ লক্ষ টাকা, আমেরিকার ব্যয় হইয়াছিল ১৯ লক্ষ টাকা, অথচ পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র এখনও রচনা করা হয় নাই, কিন্তু, ইতিমধ্যে এই বাবদ ৯৬ কোটি টাকা ব্যয় হইয়া গিয়াছে। হায়রে গরীব রাষ্ট্র পাকিস্তান।

 গত ৬ বৎসর ধরিয়া পাকিস্তান গণ-পরিষদের সভাপতি মাসিক ৪ হাজার টাকা করিয়া বেতন এবং বাড়ী ও গাড়ী সরকারী খরচায় পাইতেছেন। গণ-পরিষদের সদস্যগণের যাতায়াতের ভাড়া ও করাচী অবস্থানের জন্য