পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৩৮০

খাদ্য, বস্ত্র ও ঔষধ হইতে জনগণ বঞ্চিত

 ছয় বৎসরের মুসলিম লীগ শাসন পাকিস্তানকে খাদ্য, বস্ত্র ও ঔষধ হইতে বঞ্চিত করিয়াছে, পূর্ব পাকিস্তানকে ভিখারীর দেশে পরিণত করা হইয়াছে, লীগ সরকারের বন্ধ্যা নীতির ফলে ১৯৫১ সাল হইতে ৫৩ সাল পর্যন্ত খুলনা ও বরিশালে দুর্ভিক্ষ বর্তমান ছিল। এক খুলনা জেলায়ই প্রায় ২০ হাজার লোক দুর্ভিক্ষে মৃত্যুবরণ করে। সারা জেলা যখন কবরস্থানে পরিণত হইয়াছিল, তখনও মুসলিম লীগের নির্লজ্জ মন্ত্রীরা বালিয়া বেড়াইতেছিল যে দুর্ভিক্ষ আদতেই হয় নাই। মুসলিম লীগের অন্যতম চাঁই ও খুলনার এম এল এম, এ, সবুর তখন সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়া বলিয়াছিলেন যে, দুর্ভিক্ষে ২০ হাজার লোক মারিয়াছে এবং বহু লোক পাকিস্তান হইতে হিন্দুস্তানে হিজরত করিয়াছে। অবশ্য সেই সবুর সাহেবই এখন মুসলিম লীগের দালাল হইয়া নানাস্থানে বক্তৃতা করিয়া বেড়াইতেছেন।

লবণ সংকট

 ১৯৫১ সারের লবণ সঙ্কট মুসলিম লীগের অন্যতম অপকীর্তি। পূর্ব পাকিস্তানে লবণ তৈয়ারী হইয়া থাকে, কিন্তু মুসলিম লীগের মন্ত্রীদের কেহ কেহ নিজেদের আত্মীয় পোষণের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের লবণ তৈয়ারীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করান এবং আত্মীয়-স্বজনকে লবণ ব্যবসায়ের একচ্ছত্র সুযোগ দেন। তাহাদেরই চক্রান্তে ফলে দুই আনা মূল্যের লবণ ১৬ টাকা সের দরে পূর্ব পাকিস্থানীরা ক্রয় করিয়াছে। লীগ সরকারের দমননীতির ভয়ে জনগণ প্রতিবাদ করারও তেমন সাহস পায় নাই।

 পূর্ব পাকিস্তানে যখন খাদ্যভাবে মানুষ মরিতেছে, তখন মুসলিম লীগের নেতারা কিভাবে চাউলের ব্যবসা করিয়া লাভবান হইয়াছে, তাহার বিবরণ দেওয়া প্রয়োজন। পূর্ব পাকিস্তান সরকার করাচী হইতে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী পীরজাদা আবদুস সাত্তারের খামার হইতে ৮ টাকা মণ দরে চাউল ক্রয় করিয়া আনেন। সেই চাউল এখানে তাহারা ২০ টাকা মণ দরে, কোন কোন সময় ২১ টাকা ৪ আনা মণ দরে বিক্রয় করিয়া সরকারের কোষাগারে বিরাট অঙ্কের লাভ দেখাইয়া থাকেন। এবং এই লাভের টাকা দিয়া মন্ত্রী এবং সরকারী চাকুরিয়াদের জন্য গাড়ী কেনা হইয়া থাকে। দরিদ্রের ভাগ্য লইয়া এমন পরিহাস কেবলমাত্র মুসলিম লীগের পক্ষেই শোভা পায়।

 বস্ত্রের দিক দিয়া পূর্ব পাকিস্তানকে প্রায় উলঙ্গ করিয়া রাখা হইয়াছে। মুসলিম লীগ সরকার এদেশে নূতন বস্ত্রমিল প্রতিষ্ঠার কোন চেষ্টা করে নাই। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানে গত কয়েক বৎসরে ৭/৮ টি নূতন মিল স্থাপন করা হইয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানকে ব্যবসায়ী ও পুঁজিপতিদের শোষণের ক্ষেত্ররূপে ব্যবহার করা হইতেছে। ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে কাপড়ের দুর্ভিক্ষ মিটাইবার জন্য ওয়াহিদুজ্জামান নামক এক কুখ্যাত ব্যক্তিকে দুই কোটি টাকার ভারতীয় কাপড় আমদানীর লাইসেন্স দেওয়া হইয়াছিল। সেই কাপড়ের বেশীর ভাগ কলিকাতায় বিক্রী হয়। সামান্য কাপড় ঢাকায় আনিয়া কালোবাজারে চালান দেওয়া হইয়াছিল। পুলিশ এই চরম অসাধুতার বিষয়ে তদন্ত শুরু করার উজিরে আজম নুরুল আমীন উহা ধামাচাপা দিয়া রাখিয়াছেন। নুরুল আমীন সরকারের অবশ্যই জানা আছে যে ওয়াহিদুজ্জামান নামক এই ব্যক্তিটি অবিভক্ত বাংলায় কো-অপারেটিভ কেলেঙ্কারীর জন্য দায়ী। বাংলা বিভাগ হওয়ার ফলে সে আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছে। বিভাগ পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান আন্দোলনের সময় এই ব্যক্তিটি মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কাজ করিয়াছিল। পূর্ব পাকিস্তানের নাকি সে এখন মুসলিম লীগের একজন বড় চাঁই।

রোগীর পথ্য ও ঔষধের অব্যবস্থা

 ঔষধের ব্যাপারেও পূর্ব পাকিস্তানে অসহায় অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে। দুইজন মন্ত্রী বেনামে ঔষধের আমদানীরপ্তানীর লাইসেন্সের সিংহ ভাগ পাইতেছেন এবং তাঁহাদের কল্যাণেই পূর্ব পাকিস্তানে ঔষধ পাওয়া যায় না, অথচ পাকিস্তান হইতে ভারতে ঔষধ চালান যায়। এখানে জেলাবোর্ড, মিউনিপ্যালিটি দাতব্য চিকিৎসাগুলিতে