পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৩৯০
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তৃতাঃ ডঃ শহীদুল্লাহ সাহিত্য সম্মেলন প্রচার কমিটি ২৩ শে এপ্রিল, ১৯৫৪

পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন
উদ্বোধনী বক্তৃতা
ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
কার্জন হল, ঢাকা
২৩শে এপ্রিল, ১৯৫৪

সমাগত সাহিত্যিক ও সাহিত্যামোদী বন্ধুগণ,

 ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টে বহু দিনের গোলামীর পর যখন আযাদীর সুপ্রভাত হল, তখন প্রাণে আশা জেগেছিল যে, এখন স্বাধীনতার মুক্ত বাতাসে বাংলা সাহিত্য তার সমৃদ্ধির পথ খুঁজে পাবে। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় যে সাহিত্য সম্মিলনীর অধিবেশন হয়েছিল, তাতে বড় আশাতেই বুক বেঁধে আমি অভিভাষণ দিয়েছিলুম। কিন্তু তারপর যে প্রতিক্রিয়া হয়, তাতে হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলুম স্বাধীনতার নূতন নেশায় আমাদের মতিচ্ছন্ন করে দিয়েছে। আরবী হরফে বাংলা লেখা, বাংলা ভাষায় অপ্রচলিত আরবী পারসী শব্দের অবাধ আমদানী, প্রচলিত বাংলা ভাষাকে গঙ্গাতীরের ভাষা বলে তার পরিবর্তে পদ্মাতীরের ভাষা প্রচলনের খেয়াল প্রভৃতি বাতুলতা আমাদের একদল সাহিত্যিককে পেয়ে বসলে। তাঁরা এইসব মাতলামিতে এমন মেতে গেলেন যে প্রকৃত সাহিত্য সেবা যাতে দেশের ও দশের মঙ্গল হতে পারে, তার পথে আবর্জনার স্তুপ দিয়ে সাহিত্যের উন্নতির পথ কেবল রুদ্ধ ক'রেই খুশিতে ভূষিত হলেন না, বরং খাঁটি সাহিত্যসেবীদিগকে নানা প্রকারে বিড়ম্বিত ও বিপদগ্রস্ত করতে আদাজল খেয়ে কোমর বেঁধে লেগে গেলেন। তাতে কতক উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীরা উস্কানি দিতে কসুর করলেন না। ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র এবং অন্যান্য পশ্চিমবঙ্গের কবি ও সাহিত্যিকগণের কাব্য ও গ্রন্থ আলোচনা, এমনকি বাঙ্গালী নামটি পর্যন্ত যেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে কেউ কেউ মনে করতে লাগলেন। কেউ এ এসে মিলিত বঙ্গের ভূতের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে আবল-তাবল বকতে শুরু করে দিলেন এবং বেজায় হাত-পা ছুড়তে লাগলেন। করাচীর তাঁবেদর গত লীগ গভর্ণমেণ্ট বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতির জন্য কিছু করা দূরে থাক, বাঙ্গালী বালকের কচি মাথায় উর্দুর বোঝা চাপিয়ে দিলে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আরবী হরফে বাংলা ভাষা লেখার এবং উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টায় সহযোগিতা করছেন। এইরূপ বিষাক্ত আবহাওয়ায় ১৯৪৮ সালের পর আর কোনও সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন সম্ভবপর হয়নি। আজে জনপ্রিয় পূর্ব বাঙ্গালার গভর্ণমেণ্টের আশ্রয়ে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এক সর্বদলীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করছি।

 পূবর্ব বঙ্গবাসীদের উদারতা যে তারা চার কোটি লোকের ভাষাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার দাবী না করে বরং উর্দুকেও অন্যতম রাষ্ট্র ভাষারূপে মানতে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই উদারতায় কৃতজ্ঞ না হয়ে কেউ কেউ এখনো হুঙ্কার দিয়ে বলছেন যে, যারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী করে তারা পাকিস্তানের দুশন। আজ পূর্ব বঙ্গবাসী সমন্বরে বলবে যে এই রকম উর্দু পূজারীরাই পাকিস্তানের দুশ্মন। আমরা পাকিস্তানের জানী দোস্ত, তার জন্যে আমত্মঃপ্রাদেশিক ঐক্য চাই; সেই ঐক্যের খাতিরে আমরা বাংলার সঙ্গে উর্দুরও দাবী মেনে নিয়েছি। যাত্রা