পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৫৭৮

যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রচলিত আছে। সেখানে কি হিন্দুরা সব আসন দখল নিয়াছে? শতকরা ১০ জন হিন্দু কোটি কোটি মুসলমানকে বোকা বানাইয়া দিবে- এরূপ আজগুবি কথা আজ যাহারা বলিতেছেন, মুসলমান সমাজের উপর তাহাদের কো আস্থা নাই। কাজেই মুসলমান সমাজও তাহাদের বিশ্বাস করিতে পারে না।

 সরল, ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমান ভাইদের মনে বিভ্রান্তি জন্মাইবার জন্য ঐ মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম গলাবাজি করিতেছে যে, যুক্ত নির্বাচন প্রথা চালু হইলে ইসলামের খেলাপ হইবে।

 কিন্তু, ভাইসব! মিসর, সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি মুসলিম রাষ্ট্রে যুক্ত নির্বাচন প্রথা চালু আছে। তাহাতে সে সব দেশে ইসলামের খেলাপ হয় নাই। আমরা যুগ যুগ ধরিয়া ইউনিয়ন বোর্ড ও জেলা বোর্ডের নির্বাচনে যুক্ত নির্বাচন প্রথায় ভোট দিতেছি। তাহাতেও আমাদের ধর্মের হানি হয় নাই। আজ আইন পরিষদের নির্বাচনে যুক্ত নির্বাচন প্রথা চালু হইলেই ইসলামের খেলাপ হইবে কেন?

 পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের দিকটাও আজ আমাদের ভাবিয়া দেখা দরকার। গত ৯ বৎসর যাবৎ পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি এই অবিচার করিয়াছে। আজ কেন্দ্রীয় আইন সভার আসন বণ্টনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভিতর সংখ্যাসাম্য নীতিও চালু রহিয়াছে। এই অবস্থায় যদি পৃথক নির্বাচন প্রথা চালু থাকে এবং পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান ও সংখ্যালঘুদের ভিতর ভেদাভেদের সুযোগ নিয়া পশ্চিম পাকিস্তানের ঐ প্রতিক্রিয়াশীলরা যদি কয়েকজন দালালকে হাত করিতে পারে, তবে তাহারা চিরদিনের জন্য পূর্ব পাকিস্তানকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের উপর অবিচার চালাইয়া যাইবে। বস্তুতঃ পূর্ব পাকিস্তানকে দমিত করিয়া রাখার জন্যই প্রতিক্রিয়াশীলরা পৃথক নির্বাচন চাহিতেছেন ইহাদের এই চক্রান্ত ব্যর্থ করার জন্যও আজ যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করা প্রয়োজন।

 যে মুসলিম লীগ গত ৯বৎসর যাবৎ সব দিক দিয়াই আমাদের সর্বনাশ করিয়াছে সেই মুসলিম লীগ ও তার দোসর নেজামে ইসলাম এখনও সাম্প্রদায়িকতার উপর নির্ভর করিয়াই বাঁচিয়া থাকিতে চাহিতেছে। সেজন্যই তাহারা পৃথক নির্বাচন চাহিতেছে।

 কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা দেশের বহু ক্ষতি করিয়াছে। দেশের মঙ্গলের জন্য সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে আজ দূর করা প্রয়োজন। সেজন্যই, আমরা চাই যুক্ত নির্বাচন। যতদিন দেশে সাম্প্রদায়িকতা থাকিবে, হিন্দু-মুসলমানে রাজনৈতিক ভেদাভেদ থাকিবে, ততদিন দেশে সুস্থ গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না। সাম্প্রদায়িকতা দূর করিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যও আজ যুক্ত নির্বাচন প্রথা চালু করা অপরিহার্য। সকলে ঐক্যবদ্ধ শক্তি দ্বারা যুক্ত নির্বাচনের দাবীকে অমোঘ করিয়া তুলুন। সকলে মিলিয়া আওয়াজ তুলুন—

  • কায়েদে আজমের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য যুক্ত নির্বাচন চাই।
  • পাকিস্তানের সংহতি অটুট করার জন্য যুক্ত নির্বাচন চাই।
  • সাম্প্রদায়িকত ভেদাভেদ দুর করার জন্য যুক্ত নির্বাচন চাই।
  • গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্ত নির্বাচন চাই।
  • পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য যুক্ত নির্বাচন চাই।

পূর্ব পাক আওয়ামী লীগের পক্ষে জনাব আনুল হাই কর্তৃক ৫৬ নং সিমসন রোড, ঢাকা হইতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। পাইওনিয়ার প্রেস, ঢাল।