পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬০০
শিরোনাম সূত্র তারিখ
কাগমারী সম্মেলন সম্পর্কে মুসলিম লীগ সমর্থক ‘দৈনিক আজাদ’- এর সম্পাদকীয় মন্তব্য দৈনিক ‘আজাদ’ ১২ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৫৭

কাগমারী সম্মেলন

 সম্প্রতি মোমেনশাহীর কাগমারীতে আওয়মী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হইয়া গেল। তার সাথে একটা তথাকথিত সাংস্কৃতিক সম্মেলনের অধিবেশনও হইয়া গিয়াছে বলিয়া প্রকাশ। “তথাকথিত' বলিয়া অভিহিত করিলাম এই জন্য যে, পাক-বাংলার সাহিত্য তমুদ্দন লইয়া যাঁরা চর্চা করিয়া থাকেন তাঁদের অধিকাংশই এই সাংস্কৃতিক সম্মেলনে যোগদান করিতে পারেন নাই। কারণ তাহাদিগকে যোগদানের আহবান জানানো হয় নাই। যে কিছুসংখ্যক সাহিত্য ও সংস্কৃতিসেবী এ-সম্মেলনে যোগদানের সৌভাগ্য লাভ করিয়াছিলেন, তাঁদের আবার বেশীর ভাগই ছিলেন এক বিশেষ দল ও মতের ধারক ও বাহক। কাজেই এই সাংস্কৃতিক সম্মেলনকে কিছুতেই পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিনিধিমূলক বলা চলে না।

 পাক-বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতিসেবীদের প্রতি যত উপেক্ষা দেখানো হোক না কেন, ভারতীয় বাংলায় সাহিত্যসেবীদের প্রতি সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের শ্রদ্ধাভক্তি দেখিয়া পুলকিত হইতে হয়। মনে হয় সম্ভব হইলে ভারতীয় বাংলা উজাড় করিয়া সাহিত্যিকদিগের কাগমারী লইয়া আসিতেও তাঁদের দ্বিধা ছিল না। কিন্তু তা তো সম্ভব ছিল না, তাই গুটি কয়েকজনকে আনিয়াই দুধের সাধ ঘোলে মিটাইতে হইয়াছে।

 যাহা হোক “সাংস্কৃতিক সম্মেলন সম্পর্কে আমরা অন্যদিন আলোচনা করি। আজ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল সম্পর্কেই আমরা কিঞ্চিৎ আলোচনা করিতে চেষ্টা করিব। অবশ্য এই আওয়ামী কাউন্সিলে যেসব প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে, সেইসব প্রস্তাবের যৌক্তিকতা বা সময়োপযোগিতা সম্পর্কে আমরা কিছু বলিতে চাই না। আমরা শুধু এই অধিবেশনের কার্যক্রমের ভিতর দিয়া যে সুর ফুটিয়াছে সে সম্পর্কে কিছু বলিতে বাধ্য হইতেছি এই কারণে যে, এই সুরটি বড় ভয়ানক, ইহাতে পাকিস্তানের অশুভ পরিনামের ইংগিতই ফুটিয়া উঠিয়াছে।

 সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের যে মারাত্মক চেষ্টা করা হইয়াছিল সুখের বিষয়, প্রধানমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দীর হস্তক্ষেপে এবং তার ব্যক্তিত্বের প্রভাবে সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছে। যারা এই অপচেষ্টা করিয়াছিলেন তাঁদের উদ্দেশ্য করিয়া জনাব সোহরাওয়ার্দী সুস্পষ্ট ভাষা ঘোষণা করেনঃ “দেশের বৃহত্তম স্বার্থে, সময় ও প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করিয়া পররাষ্ট্র নীতি পরিবর্তিত হইয়া আসিতেছে। কূটনীতির উপরই পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে। এই কারণেই পররাষ্ট্রনীতির নির্ভর করে। এই কারণেই পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ১৯৫০ সালে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বছরের পর বছর ধরিয়া আকড়াইয়া থাকিতে হইবে, এমন কোন কথা নাই। এই বিশ্বাসে বলীয়ান হইয়া পররাষ্ট্র বিষয়ক ব্যাপারে বর্তমান সরকার যে নীতি গ্রহণ করিয়াছেন, হাতে হাতে তার ফল পাওয়া গিয়াছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান আজ যথেষ্ট গুরুত্ব ও মর্যাদা অর্জন করিয়াছে।”

 বলাবাহুল্য, জনাব সোহরাওয়ার্দীর এই ঘোষণায় প্রতিবাদীদের সমস্ত চেষ্টা ভাসিয়া গিয়াছিল। ইহার সমর্থনে আট শতাধিক কাউন্সিলারের করতালিতে অধিবেশন কক্ষ মুখরিত হইয়া উঠিয়াছিল বলিয়া প্রকাশ। কিন্তু তুব এই অপচেষ্টাকারীরা দমিয়া গিয়াছিলেন কি? মনে তো হয় না। “ষ্টেটসম্যানের রিপোর্ট যদি সত্য হইয়া থাকে তাহা হইলে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ইহারা আবার মাথা জাগাইয়াছিলেন এবং তাঁদের অপচেষ্টার সমর্থনে একটি প্রস্তাবও পাস করাইয়া লইয়াছিলেন বলিয়া মনে হয়। এ কথা সত্য হইয়া থাকিলে এবং এ প্রস্তাব কার্যকরী করার চেষ্টা হয়, তাহা হইলে আওয়ামী লীগে ভাঙন রোধ করা কঠিন হইয়া পড়িবে বলিয়া মনে করার কারণ আছে।