পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬৭৯

 সাইকেল ও মোটরসাইকেলের চাকার হাওয়া ছাড়িয়া দেওয়া হয় পরে দশটা সাড়ে দশটার সময় তথায় সামরিক যান ব্যতীত বেসামরিক যান চলাচল একরূপ বন্ধ হইয়া যায়।

 এই রাস্তায় পুলিশের পরিবর্তে সামরিক লোকদের নিয়োগ করা হইয়াছিল। তাহারা অস্ত্র শস্ত্রসহ পায়ে হাঁটিয়া এবং ট্রাকে করিয়া রাস্তায় টহল দিত থাকে। রথখোলার মোড়ে এক ট্রাক সশস্ত্র রক্ষীকে মোতায়েন করা হয়। এদিকে নওয়াবপুরের জনতা ছোট ছোট শোভাযাত্রাসহ “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” শ্লোগান দিয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হইতে থাকে। তাহারা কাপ্তান বাজারের মোড়ে পৌছিলে ঐ সস্থানে অপেক্ষারত সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী তাহাদের লক্ষ্য করিয়া এক রাউণ্ড গুলী ছুড়ে। প্রকাশ, ঐ গুলবির্ষণের ফলে কেহ হতাহত হয় নাই।

 নওয়াবপুর রাস্তার উভয় দিকের সমস্ত দোকান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকে। প্রতিটি বাড়ীর বারান্দা ও পথিপার্শ্বে জনসাধারণ শান্ত ও বিষাদপূর্ন নেত্রে দাঁড়াইয়া রাস্তার হালচাল লক্ষ্য করিতে দেখা যায়। বেলা প্রায় এগারটার সময় রথখোলা ও নিশাত সিনেমা হরের মোড়ের মধ্যবর্তী স্থানে একটি চলতি সামরিক ট্রাক হইতে অপেক্ষামাণ নিরীহ পথচারদদের উপর বেপরোয়াভাবে গুলী চালান হয় বলিয়া জানা গিয়াছে। ফলে একজন যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত এবং দুইজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে একটি বালককে বেয়নেট দ্বারা মাথায় আঘাত করা হয় বলিয়া জানা গিয়াছে। আরও প্রকাশ, সামরিক ট্রাকে করিয়া তাহাদের লইয়া যাওয়া হয়। সকালের দিকে নওয়াবপুরের বিভিন্ন স্থানে সামরিক লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে গুলী চালায়।

 গতকল্য সেক্রেটারিয়েট ভবনে অতি অল্পসংখ্যক কর্মচারী কার্য্যে যোগদান করেন। যাহারা উপস্থিতি ছিলেন তাহাদের মধ্যে অনেককে কোন কাজ করিতে দেখা যায় না।

 গতকল্য রেল হাসপাতালের নিকট একখানি এ্যাম্বুলেন্সে চাপা পড়িয়া এক যুবকের মৃত্যু হয়।

 অপরাহ্নে মুসলিম হল হইতে এক বিরাট জনতা পরিষদ ভবনের দিকে নানা প্রকার ধ্বনি সহকারে শান্তি পূনভাবে অগ্রসর হয়। তাহারা পরিষদ ভবনের নিকটবর্তী হইলে পুলিশ তাহাদের উপর তীব্রভাবে লাঠিচার্জ করে। তাহার তখন ইঞ্জনিয়ারিং কলেজ সীমানার মধ্যে প্রবেশ করে এবং তথা হইতে নুরুল আমিন মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে ও পুলিশ জুলুমের বিরুদ্ধে বিক্ষোপ প্রদশন করিতে থাকে। বৈকালে মুসলিম হলের নিকটও লাঠিচার্জ হয়।

 অপরদিকে মেডিক্যাল কলেজ হোষ্টেলের মধ্যে বহু ছাত্র জমায়েত হয় এবং মাইকযোগে বক্তৃতা করিতে শোনা যায়। বৈকালে যখন তাহারা বক্তৃতা করিতেছিলেন, এমন সময় পুলিশ এবং সৈন্যগণ হোষ্টেলের মধ্যে প্রবেশ করিয়া রুমের অধিকারী জনাব আবুল হাশেমকে বেয়নেটের খোঁচার ভয় দেখাইয়া মাইক কাড়িয়া লয় এবং কামরায় প্রবেশ করিয়া পেন, ঘড়ি ও রেডিও সেট লইয়া যায় বলিয়া উক্ত কামরার মালিক জনাব আবুল হাশেম জানান। পুলিশ ও সৈনিক দলের এই জুলুমের প্রতিবাদে গতকল্য সার্জেন জেনারেলের সভাপতিত্বে মেডিকের কলেজে এক সভা হয়। জানা গিয়াছে যে, উক্ত সভায় সার্জেন জেনারেল পুলিশ জুলুমের বিরুদ্ধে যথারীতি ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইবে বলিয়া ছাত্রদিগকে আশ্বাস দেন। আরও জানা গিয়েছে যে, গতকল্য সার্জেন জেনারেল ও কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডাঃ এ,কে, এম আবদুল ওয়াহেদ এই বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহিত সাক্ষাই হলেন।

জুবিলী প্রেসে অগ্নিসংযোগ

 গতক্যল জনসন রোডস্থ জুবিলী প্রেসে অগ্নিসংযোগ করার দরুন উহা সম্পূর্ণ ভস্মীভহহ হইয়া যায়। দমকল প্রায় দেড়ঘণ্টাকাল আগুন নিবাইবার কার্যে নিয়োজিত থাকে। উক্ত প্রেস হইতে মর্নি নিউজ পত্রিকা মুদ্রিত হইত।