পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬৮০

শহীদদের রুহের মাগফেরাৎ কামনা

 গতকল্য শুক্রবার শহরে প্রত্যেক সমজিদে জুম্মার নামাজের পর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় হাজার হাজার মুসল্লী শরীক হন। অপরাহ্নে প্রায় ৩/৪ জন মুসল্লী করবস্থান হইয়া সলিমুল্লা মুসলিম হরে জমায়েত হয়। জুম্মার নামাজের পর সলিমুল্লা মুসলিম হলে এক বিরাট জনতার উপস্থিতিতে কোরান তেলাওয়াতের পর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন বক্তা সকাল বেলায় পুলিশ ও সামরিক বাহিনী কর্তৃক এক বিরাট মিলিলে শান্তিপূর্ণভাবে যোগদানকারী জনতা উপর বেপরোয়াভাবে গুলী চালানোর তীব্র প্রতিবাদ করেন।

 তাঁহারা গতকল্যকার শোচনীয় ও মর্মন্তুদ দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করিয়া পুলিশ বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন এবং জনসাধারণকে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে অনুরোধ করেন। তাঁহারা আরও বলেন যে, বহু ছাত্রকে গুরুতর আহত অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। তাহাদের চিকিৎসার জন্য রক্তের প্রয়োজন্ ব্লাড ব্যাংকে অকাতরে রক্তদান করিতে হাঁহারা অনুরোধ জানান। অতঃপর বক্তাগণ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাইয়া যাইতে অনুরোধ করেন।

 বৃহস্পতিবারের ঘটনা সম্পর্কে শহরে প্রবল গুজব রটে যে, ঐদিন ৪ জনেরও বেশী লোক নিহত হয়, কিন্তু ঘটনার সংগে সংগেই তাহাদের মৃতদেহ সরাইয়া ফেলা হয়। একটি কিশোর বয়স্ক বালক সম্বন্ধে অনুরূপ গুজব শনিয়া বিশেষ অনুসন্ধানের পর জানা যায় যে বালকটি মেডিক্যাল কলেজ ও পরিষদ ভবনের মধ্যে ফুলার রোডে গুলীর আঘাতে নিহত হয় এবং তার লাশ অপসারিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় পোষ্টগ্রাজুয়েট ছাত্রীর নিকট হইতেও ইহার সমর্থন পাওয়া গিয়াছে।

পুর্ববংগ সরকারের এশতেহার
শহরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভায় প্রস্তাব গ্রহণ

 ঢাক, ২২ শে ফেব্রুয়ারী। -অদ্যকার ঢাকা শহরের অবস্থা সম্পক্তে পূর্ববংগ সরকারের এক এশতেহারে কলা হইয়াছে যে অদ্য অপরাহ্নের পরে শহরের অবস্থা অনেকটা আয়ত্তে আসে। অদ্য নওয়াবপুর রাস্তায় পুলিশের গুলী চালনার পর মোট ৪৫ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতারে স্থানান্তরিত করা হয়। ২ জন নিহত হয়।

 এশতেহারে বলা হইয়াছেঃ অদ্য সকালের দিকেই অবস্থা খারাপ হইয়া উঠে এবং ইসলামপুর ও নওয়াবপুর এলাকায় লোকজনের ভীড় হয় গুণ্ডা শ্রেণীর লোকেরা এই অবস্থার সুযোগ গ্রহন করিয়া লুটতরাজের উদ্দেশ্যে জনতার সহিত মিশে। অবস্থা যাহাতে আরও খারাপ না হইতে পারে তদুদ্দেশ্যে পুলিশ বাহিনীর সাহার্য্যার্থে সৈন্য বাহিনী আনয়ন করা হয়।

 মর্নিং নিউজ প্রেসটি জনতা পোড়াইয়া দেয়।

 কার্জন হল, হাইকোর্ট, নওয়াবপুর রোড, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রভৃতি স্থানে উদ্ধৃঙ্খল জনতাকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলী চালনার ফলে আহত মোট ৪৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ ব্যক্তি নিহত হয়।

নিরস্ত্র ছাত্র সমাবেশের উপর পুলিশের গুলীবর্ষণের নিন্দা

 গত ২১ শে ফেরুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গনে নিরীহ ও নিরস্ত্র ছাত্রসমাবেশের উপর পুলিশের অমানুষিক অত্যাচার ও গুলীবর্ষণের নিন্দা করিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ও প্রতিষ্ঠানের সভায় নিন্দাজ্ঞাপক প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কতিপয় প্রস্তাব ও কয়েকজনের বিকৃতি নিমেণ প্রদান করা হইলঃ