পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৬৮৭

সরকার আচরণের তীব্র নিন্দা করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের রূহের মাগফেরাত কামনা করতঃ তাঁহাদের শোকসন্ত ও পরিবারবর্গের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করা হয়।

 গতকল্য (শনিবার) অপরাহ্ন ৫ ঘটিকায় নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মোছলেম ছাত্রলীগ ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরী সভায় সর্বসম্মতিক্রম নিমণলিখিত প্রস্তাব কয়েকটি গৃহীত হয়ঃ-

(1)  সরকারের যে কার্যকলাপের ফলে বহু ছাত্রের জীবন বিনষ্ট হইয়াছে, তাহাতে এই সভা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিতেছে এবং সরকারের নিকট হইতে ইহার কৈফিয়ৎ তলব করিতেছে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য যে সকল কর্মচারী দায়ী, এই সভা অবিলম্বে তাহাদের অপসারণ দাবী করিতেছে।

মওলানা তর্কবাগীশের পদত্যাগ

 পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের সদস্য মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ অদ্য শনিবার লীগ পার্লামেণ্টারী পার্টি হইতে পদত্যাগ করিয়াছে। পদত্যাগের কারণ বর্ণনা করিয়া অদ্য (রবিবার) তিনি এক বিবৃতি দান করিবেন বলিয়া জানা গিয়াছে।

শনিবার পূর্ণ হরতাল পালনঃ

সান্ধ্য আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি

 গতকল্য (শনিবার) নাজিরাবাজার পশু হাসপাতালের নিকট এক জনতার উপর পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে ৪ ব্যক্তি আহত হয়। তন্মধ্যে ২ ব্যক্তি আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাহাদিগকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইহা ছাড়া শহরের আর কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে বলিয়া সংবাদ পওয়া যায় নাই।

 পূর্ব দিনের ন্যায় গতকালও পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। ঢাকা রেলষ্টেশনের কর্মচারীরাও এদিন হরতাল পালন করেন।

 কর্মচারীগণ যথারীতি উপস্থিত হইলেও কোন কাজ করেন না। অনেক বিভাগের লোক আদৌ কাজে যোগদানও করেননি। তাদের এই হরতালের বেলা ১টা পর্যন্ত চলে এবং আপডাউন মিলাইয়া মোট ৪টি ট্রেন যাতায়াত করে। প্রাতে যে সকল রেল ইঞ্জিনে কয়লা বোঝাই করা হইয়াছিল, পরে তাহাও ইঞ্জিনে কয়লা বোঝাই করা হইয়াছিল, পরে তাহাও ইঞ্জিন হইতে ফেলিয়া দেওয় হইয়াছিল বলিয়া জানা গিয়াছে।

 রাত্রি ৮টি হইতে সকাল ৫টা পর্যন্ত সন্ধা আইন জারী হইয়াছে এবং পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইহা চলিবে বলিয়া ঘোষণা হইয়াছে।

 পুলিশ ও সামরিক পাহারা পূর্বের ন্যায়ই আছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মোড়ে উহার শক্তি কিছু বৃদ্ধিও করা হইয়াছে। পূর্ব বঙ্গ পরিষদের বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার অনুকূল দাবী গৃহীত হইলে শহীদদের বিয়োগব্যথায় ব্যথিত ছাত্রগণের মধ্যে কোনও উল্লাসের সঞ্চার করিতে পারে নাই। শহরে ১৪৪ ধারর নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকিলেও হাজার লোককে রাস্তায় ঘোরাফেরা করিতে দেখা যায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সমবেত লোকগণকে বর্তমান পরিস্থিতির আলোচনা করিতে দেখা যায়। কালব্যাজ পরিধান করিয়া শত শত লোক সলিমুল্লা মোছলেম হল প্রঙ্গণে সমবেত হইয়া শুক্রবারের নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য গয়েবী জানাজা আদায় করেন।

 সকাল হইতেই হলে লাউড স্পীকার যোগে বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভাষা সমস্যার প্রকৃত বিবরণ সম্পর্কে বিভিন্ন ঘোষণা প্রচার করা হয়। বিভিন্ন বক্তা পুলিশের গুলীবর্ষণ এবং জনসাধরণের কর্তব্য সম্পর্কে বক্তৃতা দেন।