পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৬৯১

পুলিশের অনধিকার চর্চ্চা

 গতকল্য রবিবার, জনৈক প্রফেসর যখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণের সভায় যোগদানের জন্য আসিতেছিলেন, তখন পথিমধ্যে জনৈক পুলিশ তাঁহাকে তাঁহার জামায় লাগানো কালো ব্যাজটি খুলিয়া ফেলিতে বলে। তিনি তাঁহাতে অসম্মত হইলে পুলিশটি বলপূর্বক তাঁহার নিকট হইতে উহা ছিনাইয়া লয় বলিয়া জানা গিয়াছে।

জনমতের কণ্ঠরোধ করিবার কোন ইচ্ছা সরকারের নাই-

পূর্ববংগের প্রধানমন্ত্রী জনাব নূরুল আমীনের বেতার বক্তৃতা

 ঢাকা, ২৪শে ফেব্রুয়ারী। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব নুরুল আমীন অদ্য রাত্রে বলেন যে, “ভাষা বা অপর কোন সমস্য সম্পর্কে শাসনতন্ত্র মোতাবেক জনমত প্রকাশ করা হইলে, তাহার কণ্ঠরোধ করিবার কোন ইচ্ছাই সরকারের নাই।” তিনি সতর্ক করিয়া দিয়া বলেন “সরকারের নিকট প্রমাণাদি রহিয়াছে, তদ্দৃষ্টে বুঝা যাইতেছে, যে পরিকল্পনা করা হইয়াছে, বহির্দ্দিক অপেক্ষা তাহার ভিতরে আরও গূঢ় অর্থ রহিয়াছে এবং পরিকল্পনাকারীরা পাকিস্তানের বাহির হইতে প্রেরণা পাইতেছে।”

 ঢাকা বেতার কেন্দ্র হইতে বক্তৃতাদানকালে জনাব নুরুল আমীন “পাকিস্তানের শুভাকাঙ্ক্ষীদের” পূর্ণ সমর্থন কামনা করেন এবং বলেন যে, “এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করিবার জন্য এবং দেশের নিরাপত্তার প্রতি বিশ্বাঘাতকের ন্যায় যে হুমকী দেওয়া হইতেছে তাহা দমন করিবার জন্য যে ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন, সরকার সেই ব্যবস্থাই অবলম্বন করিবেন।

প্রধানমন্ত্রী বেতার বক্তৃতার বিবরণ নিমেণ প্রদত্ত হইলঃ

 আজ ঢাকায় কোন ঘটনা-দুর্ঘটনা হয় নাই।

 ঢাকার শৃঙ্খলা বিনষ্ট করিবার যে চেষ্টা করা হইয়াছে এবং ইহার ফলে যে ঘটনা-দুর্ঘটনা হইয়াছে ও সরকার যে ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন, সরকারী এতেশহারে এ যাবৎ তাহার সত্য বিবরণই কেবল প্রকাশ করা হইয়াছে। ১৪৪ ধারা জারীর যৌক্তিকতা সম্পর্কে খোলাখুলিভাবেই সন্দেহ প্রকাশ করা হইয়াছে। কলিকাতার সংবাদপত্রে সাধারণতঃ দেশের জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করিবার এবং তাহাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করিবার চেষ্টাই করা হইয়া থাকে, কিন্তু শুধু কলিকাতার সংবাদপত্রে নয়, ঢাকায়ও কোন কোন মহলে বলা হইয়াছে যে, বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যে দাবী উত্থাপন করা হইয়াছে, তাহার কণ্ঠরোধ করিবার জন্যই এই আদেশ জারী করা হইয়াছে। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইয়াছে, তৎসম্পর্কেও কতিপয় উত্তেজনাকর এবং বস্তুতঃপক্ষে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বিবৃতি দেওয়া হইয়াছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্থানীয় কতিপয় সংবাদপত্রে বলা হইয়াছে যে, শুক্রবার-এ সেনাবাহিনী নিরপরাধ জনসাধারণের উপর গুলীবর্ষণ করে, কয়েকজনকে বেয়নেট দ্বারা ঘায়েল করে এবং লুঠতরাজে যোগদান করে এই বিবরণী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

 গোলযোগের ফলে, দুর্ভাগ্যক্রমে যাহারা আহত বা নিহত হইয়াছিলেন, তাহাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের জন্য যানবাহন অচল করিয়া দেওয়ার দোকানদারগণকে হরতাল পালনের জন্য প্ররোচিত বা বাধ্য করায় এবং সরকারী কর্মচারীদিগকে কাজে যোগদান হইতে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয় বলিয়া সরকার হৃদয়ঙ্গম করিয়াছেন। কাজেই এই সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন বলিয়া সরকার মনে করেন এবং আশা করেন যে, গত বৃহস্পতিবার হইতে যে সকল ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহাদের শুধুমাত্র বিবরণ দান করিলেই শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সরকার ১৪৪ ধারা জারী করাসহ যে সকল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছিলেন জনসাধারণ তাহার যৌক্তিকতা হৃদয়ংগম করিতে পারিবেন।