পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৬৯২

 গত বৃহস্পতিবার হইতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে, তাহাতে দেখা যায়, এই ঘটনার তাৎপর্য সম্পর্কে আরও অধিক তথ্য উদঘাটন এবং যাহারা উহার প্ররোচনা দান করিতেছিল তাহাদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা একান্ত প্রয়োজন।

 ভাষা সমস্যা সম্পর্কে জনমত চাপা দেওয়ার অভিপ্রায়ে ১৪৪ ধারা জারী করা হইয়াছিল বলিয়া যে অভিযোগ করা হইতেছে, তাহা সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন। ১৪৪ ধারা জারী করার সহিত ভাষা সমস্যার কোন সম্পর্ক নাই। একদল স্বার্থান্বেষী লোক প্রাদেশিক আইন পরিষদ অধিবেশন আরম্ভের দিন এবং যতদিন উহার অধিবেশন চলে ততদিন শৃঙ্খলা নষ্ট করার পরিকল্পনা করিয়াছে বলিয়া সুষ্পষ্ট প্রমাণ পাইয়া জেলা কর্তৃপক্ষ সতর্কতা হিসাবে ১৪৪ ধারা জারী করার সিদ্ধান্ত নেন। আইন ও শৃঙ্খলা ভংগ করার যে কোন প্রয়াসের মোকাবেলা করার জন্য জেলা কর্তৃপক্ষ এই নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। সরকার আইন ও শৃঙ্খলা ভংগ করার পরিকল্পনার কথা জানিতে পারিয়াছিলেন। ভাষা বা অন্য যে কোন প্রশ্ন সম্পর্কে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনমত প্রকাশে বাধাদানের কোন অভিপ্রায়ই ছিল না। এক পক্ষেরও অনধিককালে পূর্বে সরকার কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করে নাই। ভাষার প্রশ্নে ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে মিশিল বাহির করিতে এবং সভা শোভাযাত্রার অনুমতি দান করিয়াছিলেন। তাহা হইতে এই উক্তির সত্যতা সুষ্পষ্ট হইয়া উঠিবে।

 ভাষা আন্দোলনের দাবী কিছু নয়, আইন ও শৃঙ্খলা ভংগ করিয়া শান্তিও নষ্ট করার জন্য যে একটা ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্র করা হইয়াছিল ১৪৪ ধারা জারী করার পরবর্তী ঘটনা পরিস্থিতিই তাহার প্রমাণ। এই যুক্তির সমর্থনের দুইটি বিষয় উল্লেখ করা যাইতে পারে। প্রথমতঃ শোভাযাত্রা ও জনসভা একেবারে নিষিদ্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে, ১৪৪ ধারা জারীতে তেমন কোন কথা ছিল না। নিষেধাজ্ঞায় বলা হইয়াছিল যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি লইয়া শোভাযাত্রা ও জনসভা অনুষ্ঠান করা অথবা শোভাযাত্রা বাহির করার যদিও তাহাদের ইচ্ছা ছিল তবে তাহার জন্য এই অনুমতি লওয়ার পথে কোনই বাধা ছিল না। কিন্তু তাহারা কখনও এরূপ করে নাই। দ্বিতীয়তঃ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যদা দেওয়ার জন্য প্রাদেশিক সরকারের সোপারিশ সত্ত্বেও এখনও দৃঢ়তার সহিত ছাত্র ও জনসাধারণকে হিংসাত্মক কাজে উত্তেজিত করার ও আইন ভংগের জন্য সংঘবদ্ধ করা প্রচেষ্টা চলিতেছে। এই সকল যুক্তির এবং হাঙ্গামাকারীদের কার্যকলাপ হইতে নিঃসন্দেহে ইহাই প্রতিপন্ন হয় যে, ভীষণ রকমের কোন একটা বিপর্যয় সৃষ্টি করাই ছিল তাহাদের প্রধান মতলব, শুধু জনসাধারণের সহানুভূতি লাভের জন্যই তাহারা ইহার সহিত ভাষার প্রশ্ন যোগ করে। ঢাকার সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে মিথ্যা ও ভীষণ উত্তেজনামূলক গুজব শুধু ঢাকা শহরেই প্রচার করা হইতেছে না- সমস্ত প্রদেশেই ইহা ছড়ানো হইতেছে। আইন ভংগকারীদের সমর্থন জানানোর জন্য মোছলেম লীগ এম-এল-এ গণকে এবং স্থানীয় সংবাদপত্রগুলিকেও ভীতি প্রদর্শন করা হইতেছে। স্বাভাবিক শাসন পরিচালন কার্যে বিঘ্ন সৃষ্টির জন্যও চেষ্টা চলিতেছে। স্থানীয় ছাত্র মহলকে উত্তেজিত করার জন্য প্রতি মুহূর্তে সুযোগ গ্রহণ করা হইতেছে। তাহাদিগকে এই বলিয়া উৎসাহিত করা হইতেছে যে ইহা তাহাদের জাতীয় আন্দোলন। আইন ভংগের জন্য তাহাদিগকে চাপ দেওয়া হইতেছে। অনুরূপ প্রচেষ্টার জন্য প্রদেশের বিভিন্ন স্থানেও তাহার দল প্রেরণ করিতেছে।

 উল্লিখিত ঘটনাগুলি এবং সরকারের হাতে যে সমস্ত প্রমাণ রহিয়াছে, তাহাতে ইহাই প্রতিপন্ন হয় যে, এই ষড়যন্ত্রের মূলে গভীর উদ্দেশ্য রহিয়াছে এবং ষড়যন্ত্রের নেতাগণ পাকিস্তানের বাহির হইতে উৎসাহ পাইতেছে। এমতাবস্থায় এই সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করিয়া রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে সরকার কখনও ইতস্ততঃ করিবেন না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের শুভার্ধীগণও এই কাজে সম্পূর্ণরূপে সহায়তা করিবেন।

হাসপাতালে আর একজনের মৃত্যু

 অসমর্থিত সংবাদে প্রকাশ, ঘটনার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ গত শুক্রবার পুলিশের গুলীতে আহত এক ব্যক্তি গত শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এন্তেকাল করিয়াছেন (ইন্নালিল্লাহে....... রাজেউন)।