পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৬৯৬

 সভায় নিহতদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করিয়া গুলীবর্ষণ সম্পর্কে তদন্তের দাবী জানায়।

রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দী

 হায়দারাবাদ, ২৪ শে ফেব্রুয়ারীঃ জনাব এইচ, এম, সোহরাওয়ার্দী সংবাদপত্রে এক বিবৃতি দান প্রসঙ্গে ঢাকায় গুলীবর্ষণের ফলে নিহত ব্যক্তিদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেন।  তিনি বলেন, “আমি একদিকে শুনিতেছি ছাত্ররা শান্ত ছিল এবং আর একদিকে শুনিতেছি, তাহারা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করিয়াছিল। সুতরাং স্বভাবতই প্রশ্নে উঠে পুলিশ ঘটনাস্থলে কি করিতেছিল এবং আইনসংগতভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য তাহারা কেন শান্তিপূর্ণভাবে শোভাযাত্রা করিতে দেয় নাই।

 তিনি বলেন, ঘটনা বর্তমানে ঘটিলেও বহু পূর্বেই পূর্ববংগে ভাষা সম্পর্কে বিতর্ক দেখা দিয়াছে। আমি সেই সময় একটি জনসভায়ও এক বিবৃতিতে বলিয়াছিলাম, যে আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে তদনুসারে উর্দুই হইবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু সেই সময় আমি ইহাও বলিয়াছিলাম যে, বাংলা পাকিস্তানের জনগণের একটি বিরাট অংশের মাতৃভাষা প্রকৃতপক্ষে ইহা জনসাধারণের সংখ্যাগুরু অংশের মাতৃভাষা।

 বাংলার বুকে উর্দুকে অবশ্য জোর করিয়া চাপাইয়া দেওয়া হইবে না, তবে বিদ্যালয়ে আবশ্যিক দ্বিতীয় ভাষারূপে ইহা পড়ান হইবে এবং যথাসময়ে এই প্রদেশবাসীগণ এই ভাষার সহিত পরিচিত ইহয়া উঠিলে প্রদেশের শিক্ষিত সমাজ ও সরকারী কর্মচারীগণ আপনা হইতেই ইহা পড়িতে ও লিখিতে শুরু করিবে। তখন উর্দু তাহাদের নিকট গৌরবজনক মর্যাদা লাভ করিবে এবং পূর্ব পাকিস্তানীরাও দুই ভাষাভাষী হইবে। পারস্পরিক সমঝোতা ও সম্প্রীতির ভাব রক্ষার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানেরও বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়া উচিত..... ইহাই সমস্যা সমাধানের বাস্তব উপায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করিবার জন্য বারংবার জেদ করিবার প্রতিক্রিয়া হিসাবে দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি ঘটিয়াছে। মোট কথা বাংলায় বা পশ্চিম পাকিস্তান উর্দুর প্রসারের জন্য যখন কোন চেষ্টা করা হইতেছে না তখন এই প্রশ্ন উত্থাপনের হেতু কি? ইহা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারন পূর্ব পাকিস্তানের সম্পর্কে কিছুই অবগত নহে। তজ্জন্য অনেক সংবাদপত্রের সম্পাদক ফাঁদে পড়িয়াছেন। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর এবং প্রচার বিভাগের মতামত অবগত হইবার জন্য আমি পত্র লিখিয়াছিলাম এবং তাঁহাদের অভিমত জানিতে পারিলে একটি বিবৃতি দিবার সিদ্ধান্ত করিয়াছিলাম কিন্তু আমি তাঁহাদের নিকট হইতে কোন জওয়াব পাই নাই। বর্তমান পরিস্থিতির দরুন আমাকে বাধ্য হইয়া এই ক্ষুদ্র বিবৃতি দিতে হইল।

ফেব্রুয়ারী ২৬

সোমবার ঢাকা শহরে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত

---------

পাঁচদিন পর অদ্য স্বাভাবিক নাগরিক জীবন পুনরারম্ভ

---------

জননিরাপত্তা আইন অনুসারে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি গ্রেফতার

(স্টাফ রিপোর্টার)

 গতকল্য (সোমবার) রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পঞ্চম দিবসে ঢাকা শহরে সর্বত্র পূর্ণ হরতাল প্রতিপালিত হয়। ঐদিন সকল প্রকার যানবাহন, বাজার, দোকান-পাট, ব্যাংক, সিনেমা ও খেলাধুলা বন্ধ থাকে এবং কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের অফিসগুলি ও আদালতসমূহ জনশূন্য বলিয়া প্রতীয়মান হয়।