পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৬৯৭

 সোমবারে শহরে উত্তেজনাপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজমান থাকিলেও কোনরূপ দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় নাই। এবং ছাত্রদের মধ্যে কেহ গ্রেফতার হইয়াছে বলিয়াও শোনা যায় নাই। অদ্য মঙ্গলবার হইতে শহরে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসিবে বলিয়া মনে হয়।

 সকাল হইতে সলিমুল্লা মুসলিম হল প্রাঙ্গণে ছাত্র ও জনসাধারণকে জমায়েত হইতে দেখা যায় এবং বহু বক্তা মাইকযোগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার এবং অবিলম্বে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের দাবীতে বক্তৃতা করেন।

 বেলা প্রায় ১১টার সময় পুলিশ বাহিনী, ই,পি, আর দল সলিমুল্লা মুসলিম হল হইতে মাইক ছিনাইয়া লইবার জন্য হল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করিয়া হলগৃহ ঘিরিয়া ফেলে। কিন্তু হলের ভিতরে গেট বন্ধ থাকায় পুলিশ বাহিনী ভিতরে প্রবেশ করিতে সক্ষম হয় না।

 এই সময় সলিমুল্লা হলের প্রভোক্ট ডঃ ওছমান গণি দুইজন অধ্যাপকসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলাম্যাজিস্ট্রেটের সহিত আলাপ-আলোচনা করেন। আলোচনার পর ছাত্রগণ ডঃ গণির অনুরোধক্রমে মাইকটি তাঁহার (ডঃ গণির) হাতে দেয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ ও ই,পি,আর বাহিনী ঘটনাস্থলে হইতে চলিয়া যায়।

 তারপর অনুমান ৪ হাজার লোকের এক সভা হয়.....।

বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করিবার দাবী আদায়ের আশ্বাসঃ

----------

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ ওয়ার্ক কমিটির প্রস্তাব

----------

ধ্বংসাত্মক কার্য্য হইতে বিরত থাকার উপদেশ

 পূর্ব্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত এক প্রস্তাবে জনসাধারণকে দৃঢ় আশ্বাস দেওয়া হইয়াছে যে, গণপরিষদ কর্তৃক যাহাতে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গৃহীত হয় তজ্জন্য লীগ পার্লামেণ্টারী দলের সুপারিশ আদায়ের অভিপ্রায়ে ওয়াকিং কমিটি সবর্বপ্রকার চেষ্টা করিবেন।

 প্রাদেশিক লীগ ওয়াকিং কমিটির তিন দিনব্যাপী বৈঠক গতকল্য (সোমবার) সমাপ্ত হইয়াছে।

 ওয়ার্কিং কমিটি ধ্বংসাত্মক কার্যে লিপ্ত লোকদের সহিত সকল সম্পর্ক ছিন্ন করিতে এবং পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণের জন্য যে সকল শত্রু চেষ্টা করিতেছে তাহাদের আক্রমণাত্মক মতলব হইতে পাকিস্তানকে রক্ষা করার ব্যাপারে সাহায্য করিতে জনসাধারণ এবং ছাত্রবৃন্দকে অনুরোধ করেন।

 মুছলমানদের ঐক্য ও সংহতির জন্যও ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাবে আবেগময় আবেদন জানান হয়।

 ওয়াকিং কমিটির প্রস্তাবে বলা হইয়াছেঃ পুলিশের গুলীবর্ষণের ফলে কয়েকজন ছাত্র ও সাধারণ লোক নিহত হওয়ার গভীর দুঃখ প্রকাশ করিয়া এবং পুলিশের কাজের তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাইয়া ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব গঠন করিয়াছিলেন, তাহার পরে পরিস্থিতির উন্নতি হয় নাই; আইন ও শৃঙ্খলা ভংগের জন্য জনসাধারণ প্রকাশ্যে প্ররোচিত হইতেছে এবং পরিস্থিতিকে আর অবনত করার জন্য আতঙ্ক ও হিংসাত্মক কাজ অবাধে চলিতেছে বলিয়া কমিটির গভীর দুঃখের সহিত লক্ষ্য করিতেছেন।