পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৬৯৯

 জনাব কাজী গোলাম মাহবুব বলেনঃ

 “প্রধানমন্ত্রী জনাব নুরুল আমীন বেতার বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনের উপর যে কটাক্ষ করিয়াছেন, আমরা তাহার তীব্র নিন্দা করি। আমরা জনসাধারণের কাছে তাঁর বক্তব্যের আসল রূপ প্রকাশ করিয়া দেওয়া প্রয়োজন মনে করি।

 জনাব নুরুল আমীন বলিয়াছেন যে, ভাষা বা অপর কোন সমস্যা সম্পর্কে শাসনতন্ত্র মোতাবেক জনমত প্রকাশ করা হইলে তাহার কণ্ঠরোধ করার কোনও ইচ্ছা সরকারের নাই। তাঁর কার্যকলাপ এবং ঢাকার বুকে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক হত্যা এবং পুলিশ ও মিলিটারী আচরণই প্রমাণ করিতেছে যে, এই উক্তি সর্বৈব মিথ্যা। যে শাসনতন্ত্রের উপর নুরুল আমীন সরকার প্রতিষ্ঠিত, তাহা বৃটিশ আমলের কুখ্যাত দমনমূলক আইন ও অর্ডিন্যন্সেরই সমষ্টি। এই দমনমূলক আইনের বলেই তিনি তাঁহার স্বৈরচারী শাসন কায়েম রাখিয়াছেন।

 জনাব নুরুল আমীন আরও বলিয়াছেন যে, আন্দোলনকারীর পাকিস্তানের বাহির হইতে প্ররণা পাইতেছেন। এই উক্তি প্রমাণ করিবার জন্য আমরা তাঁহাকে চ্যালেঞ্জ করিতেছি। বর্তমান আন্দোলন সমগ্র দেশবাসীর আন্দোলন এবং ইহার নেতৃত্ব করিতেছেন বিভিন্ন দল ও মতাবলম্বী কর্মীবৃন্দ। জনাব নুরুল আমীন তাঁহার ঘৃণ্য কার্যকলাপ আজ আর গোপন রাখিতে পারিতেছে না, তাই তিনি এবং লীগ নেতৃবন্দ মিথ্যা রটনার পথ বাছিয়া লইয়াছেন। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে, যে জনতা গুলির সম্মুখে বুক পাতিয়া দিয়াছে তাহারা এই সমস্ত অপপ্রচার বিভ্রান্ত হইবে না।

 তৃতীয়তঃ আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিয়া শান্তি বিনষ্ট করার জন্য কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ ও জনসাধারণের উপর তিনি যে দোষারোপ করিয়াছেন তাহার উপর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। আমরা শুধু এইটুকুই বলিতে চাই যে, সরকারের পুলিশ ও মিলিটারীই শান্তিভঙ্গ করিয়াছে এবং বর্তমান বিশৃঙ্খলার জন্য সরকারই দায়ী। সংগ্রাম পরিষদ বরাবরই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলিয়াছেন এবং এখনও শান্তিপূর্ণ হরতালের নির্দেশ দিয়াছেন, আমরা সবর্বপ্রকার বিশৃঙ্খলার বিরোধী।

 জনাব নুরুল আমীন আর বলিয়াছেন যে, ছাত্রগণ জনসভা ও শোভাযাত্রা করার অনুমতি চাহিলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ঐরূপ অনুমতি দিতেন। কিন্তু আসল ব্যাপার এই যে, সংগ্রাম পরিষদ অনুমতি প্রার্থনা করিয়া ব্যর্থকাম হইয়াছেন।

 অতঃপর জনাব নুরুল আমীন “ব্যবস্থা পরিষদ কর্তৃক বাংলা ভাষার দাবী স্বীকৃত হওয়ার পরও হরতাল পালন” সম্পর্কে যাহা বলিয়াছেন, সে প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট... আমাদের দাবী মানিয়া লইলেই আন্দোলন ক্ষান্ত হইবে। অন্যথায় শহীদানের বুকের রক্ত-রঞ্জিত শপথ লইয়া জনসাধারণের আগাইয়া চলার অভিযান কিছুতেই ক্ষান্ত হইবে না।

 প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীন তাঁহার বক্তৃতায় মিলিটারীর কাজের সমর্থনে যে সমস্ত উক্তি করিয়াছেন, তাহা জনসাধারণের তীব্র ঘৃণারই উদ্রেক করে।

 এই ব্যাপারে দুইটি বিষয়ে আমরা জনসাধারণকে সতর্ক করিয়া দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিতেছছি

 প্রথমতঃ জনাব এ, কে, ফজলুল হককে পূর্ব্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রীর গদীতে বসাইবার আহ্বান জানাইয়া প্রকাশিত এশতেহার। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সহিত এই এশতেহারের কোন সম্পর্ক নাই। আমরা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, আমাদের আন্দোলন কোন বিশেষ ব্যক্তি বা দলকে কেন্দ্র করিয়া নহে, আমাদের আন্দোলন সর্ব্বদলীয়।