পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭০০

 দ্বিতীয়তঃ প্রাদেশিক লীগ ও বিভিন্ন লীগ নেতৃবৃন্দ এখন কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করিয়া জনসাধারণকে বুঝাইতে চাহিতেছেন যে, তাঁহারা ভাষা আন্দোলনের সমর্থক। জনগণ লীগের এই চালে বিভ্রান্ত হইবে না। শহরে যে নরহত্যা সংঘটিত হইয়াছে পুলিশ-মিলিটারী যে জঘন্য আচরণ করিয়াছে তাহার জন্য দায়ী মুসলিম লীগ ও লীগ সরকারই। এই হত্যাকাণ্ডের জওয়াব মুসলিম লীগকেই দিতে হইবে। সেই কারণেই আমরা দেখিয়াছি যে ব্যবস্থা পরিষদের বহু সদস্য পূর্ব্ববঙ্গ লীগ পার্লামেণ্টারী পার্টি হইতে পদত্যাগ করিয়াছেন। আমরা এই সমস্ত পদত্যাগী সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাইতেছি।

ফেব্রুয়ারী ২৭

সলিমুল্লা মুসলিম হলে পুলিশ কর্তৃক তল্লাসী'

--------

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক ও বহু ছাত্র গ্রেফতার

--------

মেডিক্যাল হোস্টেলে নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের বিলোপ

 গতকল্য (মঙ্গলবার) প্রায় বেলা আড়াই ঘটিকায় সলিমুল্লা মুসিলম হলে খানাতাল্লাসী হয়। বহু পুলিশ হলে অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া প্রত্যেকটি কামরা তল্লাসী করে। এই তল্লাসী প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ চলে। পরে অনুমান ৩০ জন ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মুসলিম হলের হাউস টিউটর ডঃ মফিউদ্দিন আহমদকেও পুলিশ গ্রেফতার করিয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে।

 তল্লাসীর সময় ভাইস চ্যান্সেলর, মুসলিম হলের প্রভোক্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে গেটের নিকট দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখা যায়। প্রকাশ, পুলিশ তাঁহাদিগকে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয় নাই। মেডিক্যাল হোস্টেল প্রাঙ্গণে নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পুলিশ ভাঙ্গিয়া দিয়াছে।

 এই দিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক মুনির চৌধুরী ও অধ্যাপক ডঃ পি, সি, চক্রবর্তীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ইহাদের ছাড়াও জগন্নাথ কলেজের প্রফেসর আজিত কুমার গুহ এবং বরিশালের এম, এল, এ মিঃ সতীন্দ্রনাথ সেনকেও পুলিশ গ্রেফতার করে।

 বেলা প্রায় আড়াইটার সময় পুলিশ মুসলিম হলের গেটের তালা ভাঙ্গিয়া ভিতরে প্রবেশ করে এবং প্রত্যেক কামরা তন্ন তন্ন করিয়া খানাতল্লাসী করে। এই তল্লাসীর সময় ছাত্রগণ কোন প্রকার বাধা দেন নাই। ছাত্রগণ অভিযোগ করেন যে, তল্লাসীর সময় পুলিশ বহু পুস্তক ও অন্যান্য জিনিসপত্রও লইয়া গিয়াছে। প্রকাশ, জনৈক ছাত্রের অভিভাবক একটি বন্দুক আনিয়াছিলেন, পুলিশ সেই বন্দুকটিও লইয়া যায়।

 গতকল্য মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে শহীদানের যে স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হইয়াছিল, পুলিশ সন্ধ্যায় তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে।

 গতকল্য (মঙ্গলবার) শহরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসে। একমাত্র শিক্ষায়তনসমূহ ছাড়া শহরের প্রতিটি দোকান ও অফিস কাছারী পুনরায় খোলা হয় এবং সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কাজ-কর্ম চলে। শহরের রাস্তায় অন্যান্য দিনের চাইতে গতকল্য যানবাহন এবং জনতারও অধিক ভীড় পরিলক্ষিত হয়। শহরে সিনেমা গৃহসমূহ ও সার্কাস পার্টি এই কয়দিন বন্ধ থাকিবার পরে পুনরায় খোলা হয়। জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা খেলাও এইদিন অনুষ্ঠিত হয়।