পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৭০৫
শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভাষা-আন্দোলনকালীন দৈনিক আজাদ-এর দুটি সম্পাদকীয় দৈনিক আজাদ ২২ ও ২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২

(১)

তদন্ত চাই

 গতকাল ঢাকার বুকে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের নিকটে যে শোচনীয় দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহা যেমন মর্মভেদী তেমনি অবাঞ্চিত। আইন অমান্য, নিয়মভংগ, উদ্ধৃংখলতা সমর্থনযোগ্য নয়, কিন্তু এই সংগে এ কথাও সত্য যে, আইন অমান্য হওয়ার মত ক্ষেত্র সৃষ্টি করাও কোন গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত নয়।

 বিগত দুই দিনের ঘটনা পর্যালোচনা করিলে দেখা যায় যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করিবার দাবীর সমর্থনে ছাত্র প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হইতে প্রায় একপক্ষ পূর্বে ধর্মঘট পালন করিবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হইয়াছিল। গত পরশু তারিখে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হঠাৎ ১৪৪ ধারা জারী করিয়া শোভাযাত্রা ও সভা-সমিতি বন্ধ করিয়া দেন। গতকাল এই ব্যাপারকে কেন্দ্র করিয়া ছাত্র বিক্ষোভ হইয়াছে, টিয়ার গ্যাস ও গুলি চলিয়াছে, কতকগুলি হতাহতও হইয়াছে।

 ১৪৪ ধারা জারী করিবার কোন কারণ ঘটিয়াছে কিনা, এই প্রশ্নই সকলের আগে মনে হয়। কয়েকদিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন যখন এখানে আসিয়াছিলেন, তখন ঢাকার স্কুল-কলেজের ছাত্ররা ধর্মঘট পালন এবং বিরাট শোভাযাত্রা করিয়াছিল, তখন শহরে শান্তিভংগ হয় নাই। গতকল্য ছাত্র ধর্মঘঁট ও শোভাযাত্রা হইলে শান্তি ভংগের আশংকা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ কতটা নির্ভরযোগ্য সংবাদ পাইয়াছিলেন, বর্তমান মন্ত্রীসভা দেশবাসীকে তাহা জানাইতে বাধ্য বলিয়া আমরা মনে করি।

 গতকল্যকার ঘটনার মধ্যে গুলি চালাইয়া কতকগুলি ছাত্রকে হতাহত করার ব্যাপার সব চাইতে বড় হইয়া উঠিয়াছে। পাকিস্তানে এরূপ ঘটনা ঘটিতে পারে বলিয়া আমরা কখনও ভাবিতে পারি নাই- দেশের জনসাধারণও আশা করে নাই। গুটিকতক বালক ও যুবক যদি নিয়মবিরোধী কার্য করিয়াই থাকে, এমন কি যদি তাহারা কর্তৃপক্ষকে উত্তেজনার কারণও দিয়া থাকে, তাহা হইলেও গুলি চালাইবার মত সংকটাপন্ন অবসস্থা হইয়াছিল কিনা, তাহা বিশেষভাবে বিবেচ্য, হতাহতদের অনেকের আহত স্থান সম্পর্কে যে সংবাদ পাওয়া গিয়াছে, তাহাতে নির্বিচারে গুলি চালান হইয়াছে বলিয়া আমরা মনে করিতেছি। কেবল টিয়ার গ্যাস ছাড়িয়া জনতাকে ছত্রভংগ করা কি সম্ভব ছিল না? দেহের উর্ধ্বাংগে গুলি চালান সুবিবেচনা সংগত কিনা, অথবা উহা সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কিনা, তাহাই আজ আমরা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করিতেছি। উর্ধ্বাংগে গুলি চালানোর কথা দূরে থাক, মোটেই গুলি চালাইবার প্রয়োজন হইয়াছিল বলিয়া আমরা মনে করিতে পারিতেছি না।

 সমস্ত অবস্থা বিবেচনা করিয়া আমরা মনে করি, একটা নিরপেক্ষ শক্তিশালী ও জনসাধারণের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের লইয়া গঠিত কমিটির দ্বারা এই ঘটনার বিশদ ও প্রকাশ্য তদন্ত হওয়া আবশ্যক। হাইকোর্টের জজ এবং বেসরকারী ব্যক্তিদের লইয়া এই কমিটি গঠিত হওয়া প্রয়োজন। স্বাধীন দেশের নাগরিকগণের ন্যায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য দেশবাসীর পক্ষ হইতে এই তদন্ত দাবী করিতেছি। তদন্তকালে প্রধানতঃ নিমেণাক্ত বিষয়গুলির বিচার করা আবশ্যক-(১) ১৪৪ ধারা জারী করিবার প্রয়োজন কি ছিল? (২) বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ এলাকার মধ্যে পুলিশের আক্রমণ চলিয়াছিল কি? (৩) গুলি চালাইবার মত অবস্থা ঘটিয়াছিল কি? উপরে আমরা