পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৭০৬

যে তদন্ত দাবী করিয়াছি, উক্ত প্রস্তাব কার্যকরী করিলে সমস্ত ঘটনা এবং জনকয়েক তরুণের মৃত্যুর জন্য কাহারা দায়ী, তাহাও প্রকাশ হইবে বলিয়া আমরা ঘটনা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করিলাম না।

 গতকল্যকর দুর্ঘটনায় যে সমস্ত পরিবার শোকসন্তপ্ত, তাহাদের শোককে আমরা নিজেদের শোক বলিয়া গণ্য করি, আমরা সেই সব পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাইতেছি।

(২২শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২)

(২)

ভুলের মাশুল

 গত শুক্রবার বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গণ্য করার জন্য পাক-গণপরিষদের নিকট সুপারিশ করিয়া প্রধানমন্ত্রী জনাব নুরুল আমীন ব্যবস্থা পরিষদে এক বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করেন; উহা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বহু বিলম্বে এবং অবাঞ্চিত ঘটনার পর মন্ত্রিসভা ও ব্যবস্থা পরিষদের সদস্যগণের আংশিক শুভবুদ্ধি উদয় হইয়াছে দেখিয়া সকলেই সুখী হইবেন। কিন্তু এই প্রস্তাব কার্যকরী করণে মন্ত্রিসভা ও তাদের সমর্থক দল কতটা দৃঢ়তা দেখাইবেন, এ সম্পর্কে জনমনে সন্দেহের অবসান হয় নাই। বিশেষতঃ যেসব ঘটনার পর উক্ত প্রস্তাব পেশ ও গ্রহণ করা হয় উহাই মন্ত্রিসভার উপর জনসাধানণের আস্থা-হ্রাস করিয়াছে।

 প্রস্তাব পেশ কিরবার সময় জনাব নুরুল আমীন বলেন যে, গত বৃহস্পতিবারে সরাকার যে ব্যবস্থা অবলম্বন করেন তাহা রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত দাবীর বিরোধী বলিয়া মনে করার নানরূপ ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হইয়াছে। তিনি বলেন যে, সেরূপ বিরোধিতা করার ইচ্ছা সরকারের নাই। ইহাই যদি প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীসভার প্রকৃত বক্তব্য হয়, তাহা হইলে তাহারা ২১শে তারিখের পূর্বেই উহা প্রকাশ না করার কারণ দুয়ে রহস্যরূপে থাকিয়া যাইতেছে। এমন কি ২১শে তারিখের সমাল বেলাতেও এরূপ একটা বিবৃতি মন্ত্রিসভার তরফ হইতে প্রকাশিত হইলে পরবর্তী মর্মন্তুদ ঘটনা হইত না এবং আমাদের বিশ্বাস, কতকগুলি অমূল্য জীবনেরও অবসান হইত না। সুতরাং নানারূপ ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হইয়াই থাকে, তাহা হইলে সেজন্য জনসাধারণকে দোষ দেওয়া যায় না।

 শহরে ১৪৪ ধারা জারীর কারণ ব্যাখ্যা করিতে গিয়া প্রধানমন্ত্রী বলিয়াছেন, সরকার জানিতে পারিয়াছেন যে, কোনও কোনও লোক শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অচল করিতে চায়। ২২শে তারিখে প্রকাশিত সরকারী বিবৃতিতেও এই মর্মে মন্তব্য প্রকাশিত হইয়াছিল যে, যে সকল তথ্য আছে তাতে জানা যায়, বেআইনী কার্যকলাপের দরুন আজকের (অর্থাৎ ২১ শে তারিখের) অবাঞ্চিনীয় ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহার জন্য দায়ী এমন একদল লোক, যাহাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নাই। কথাটা যদি সত্য হয় তাহা হইলে এতদিন জনসাধানণের নিকট এসব তথ্য যতদূর সম্ভব উদঘাটন করা হয় নাই কেন? যদি পূর্বাহেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা সম্পর্কে মন্ত্রিসভার মনোভাব প্রকাশিত হইত এবং দেশবাসীর নিকট রাষ্ট্র-বিরোধীদের কার্যকলাপ প্রকাশিত হইত, তাহা হইলে গুলি চালান বন্ধ হত। ১৪৪ ধারার প্রয়োজন হইত না। মন্ত্রিসভা আজ নিজেদেরে যে অবস্থা করিয়াছেন তাহাকে কেবল সুস্পষ্ট অভিযোগ দ্বারা দেশের জনসাধারণকে স্বীকৃতি বা তাহাদের আস্থা অর্জিত করিতে পারিবেন বলিয়া মনে হয় না। দেশে জনসাধারণ শান্তি ও শৃংখলাকারী বা রাষ্ট্রবিরোধীদের কখনও সহ্য করিবে না। ছাত্রসমাজের দেশাত্ববোধের উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। সুতরাং সরকার আজ তাঁহাদের খোলা ঢেল টেবিলে রাখুন। সব তথ্য হয়ত প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু