পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭২২

প্রজাস্বত্ব আইনের সরাসরি দখলের বিধান অনুযায়ী সরকার প্রদেশের মোট ৫০,০০০ টাকা ও তদূর্ধ্বের বার্ষিক আয়বিশিষ্ট বড় বড় জমিদারগুলি দখল করার পর এমন অবস্থায় আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন যে, অতঃপর সরাসরিভাবে দখল করা আর সম্ভবপর হয় নাই। সুতরাং, অবশিষ্ট সমস্ত রাজস্বভোগীদের স্বত্ব বর্তমান বৎসরে দখল করার সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করিয়াছেন।

বন

 চলতি আর্থিক বৎসরে এই প্রদেশের রক্ষণ ও বন সম্পদের উন্নতির জন্য ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে।

 কাঠ ও অন্যান্য বনজদ্রব্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং বর্তমান স্টক সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্য বন বিভাগ কর্তৃক বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হইয়াছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন হইতে কাঠ সংগ্রহ পরিকল্পনার জন্য ২১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে।

 পূর্ব পাকিস্তান বেসরকারী বন আইন মোতাবেক সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনীত বেসরকারী বনসমূহ বেসরকারী বন সংরক্ষণ পরিকল্পনা মতে পরিচালিত হইতেছে। এই উদ্দেশ্যে ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে।

 সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বনসমূহের সংস্কার পরিকল্পনাও কার্যকরী করা হইতেছে এবং এই উদ্দেশ্যে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে।

সেচ

 সেচ কার্যের জন্য ৮ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। সেচ পরিকল্পনাগুলির মধ্যে কর্ণফুলী পরিকল্পনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উহার জন্য বাজেটের ৪ কোটি বরাদ্দ করা হইয়াছে। এই পরিকল্পনার কাজ সমেত্মাষজনকভাবে অগ্রসর হইতেছে। আশা করা যায় যে, ১৯৫৬ সালের মাঝামাঝি ভাগে এই পরিকল্পনার কাজ সম্পন্ন হইবে।

 গঙ্গা-কপোতাক্ষ পরিকল্পনা আকেরটি গুরুত্বপূর্ণ সেচ পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে আনুমানিক ১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা খরচ হইবে। ইহার জন্য ক্যাম্প, অফিস গৃহ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মাণ এবং আবশ্যকীয় সামগ্রী সংগ্রহের প্রাথমিক কাজ প্রায় সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে। প্রধান এবং শাখা খাল খননের কাজ অগ্রসর হইতেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন গৃহের ভিত্তি স্থাপনের কাজও আরম্ভ করা হইয়াছে। এই পরিকল্পনার জন্য বাজেটে ৭০ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের কাজ অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলায় বাকী অংশের সেচ ও জল নিষ্কাশন পরিকল্পনা তৈয়ারীর উদ্দেশে জাতিসংঘ প্রেরিত একজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে গঙ্গা-কপোতাক্ষ পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত সমগ্র অঞ্চল জরীপ করা হইতেছে। বর্তমান বৎসরের বাজেটে উহার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে।

 তিস্তা বাঁধ পরিকল্পনা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা। উহার জন্য আনুমানিক ৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হইবে। বাজেটে উহার জন্য ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। আশু ফল লাভের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনিয়ারিং কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি উপ-পরিকল্পনা (তিস্তা পরিকল্পনা প্রথম পর্যায়ে) তৈরী করা হইয়াছে। এই উপ-পরিকল্পনায় আনুমানিক ১৬ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা খরচ হইবে। উহার কাজ ইতিমধ্যেই আরম্ভ করা হইয়াছে। এই উপ-পরিকল্পনাটির জন্য বাজেটে ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে।

 এতদ্ব্যতীত অধিক খাদ্যশষ্য উৎপাদনের জন্য অনেকগুলি জলনিষ্কাশন পরিকল্পনা কার্যকরী করা হইতেছে। প্রায় ৫ লক্ষ একর জমি উন্নয়ন ও বার্ষিক ৮০ লক্ষ মণ অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনই এই পরিকল্পনাগুলির মূল লক্ষ্য। উহাদের জন্য বাজেট ৩৪ লক্ষ টাকা ধরা হইয়াছে।