পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭২৮

 এই পাকিস্তানের জন্ম এই স্বাতন্ত্রবোধ থেকে হয়েছিল সেটা প্রমাণ করবার জন্য বেশী দূরে যেতে হয় না। কোরান থেকে দু’একটি কথা উদ্ধৃত করে আমার কথা যে অন্যায়ও কৌতূহলপ্রসূত নয় সেটা প্রমাণ করব। কোরান বলেছে যে সমস্ত মানবজাতি এক মণ্ডলীর অন্তর্ভূক্ত। বিশ্ব মানব একই মানবতার শৃংখলে আবদ্ধ। এই ভিত্তিকে-এই আদর্শকে যদি আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করি তাহলে মানব জাতির বিভেদ সৃষ্টি করা হবে। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কেহ সম্পূর্ণ স্বীকার করে নিয়েছে- কেত সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে আবার কেহবা ২/৪/৭ আনা স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রকার স্বতন্ত্রবোধ বৈষম্যের দরুন পৃথিবীতে জাতিভেদের সৃষ্টি হয়েছে। এই জাতিভেদের বিরুদ্ধে যাঁরা সংগ্রাম করেছেন তাঁরা যুগে যুগে অবতার বা মহাপুরুষ বলে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ইসলাম ধর্ম প্রচারের পূর্বে পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত হয়েছিল এবং জাতিভেদ দূর করাই ছিল ইসলামের প্রচেষ্টা। ইসলাম প্রচার করল যে মানবজাতি এক। কিন্তু অস্বাভাবিক ভৌগলিক জাতীয়তাবোধ পৃথিবীর মানুষকে বিভক্ত করেছে। China for chinese, India for Indians and Russia for Russians, এ কথা প্রমাণিত হতে চলেছে যে নিরাপত্তা কাউন্সিল মানব জাতির সার্বভৌমত্বের যোগসূত্র খুঁজে পায় নাই। মানবতার ধর্মভিত্তিক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও সকল মর্যাদাকে যদি স্বীকার করি তাহলে মানব জাতির এই অধিকার লাভ সম্ভব হবে। কোরানের এই আদর্শের বাস্তব রূপায়ণের জন্যও সে আদর্শকে পরিপূর্ণ করা জন্য পাকিস্তানের স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। জনাব স্পীকার সাহেব, পাকিস্তানের দাবী ছিল দ্বিজাতি ভিত্তির উপর। এই দ্বিজাতিবাদ ভিত্তি করে দুটো আদর্শের সংগ্রামের উপর পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে অর্থাৎ বিশ্ব মানব সভায় পাকিস্তান বা আমাদের স্বাতন্ত্র্যবোধের দাবী স্বীকৃত হয়েছে। তার ফলে পাকিস্তান জন্মলাভ করেছে। তখন ভারত বিভাগকে মাতা বিভাগ করবার সমপর্যায় মত বলা হয়েছিল। যারা পাকিস্তানের বিরোধীবাদী ছিল তাদের সঙ্গে সক্রিয় agreement, সমঝোতা করে পাকিস্তানের সৃষ্টি হল। তারা পাকিস্তানের আদর্শকে স্বীকার করে নিয়েছিল। আজকে যদি এই স্বাতন্ত্র্যবাদকে অস্বীকার করা যায় তাহলে বলতে হবে যে পাকিস্তান দাবীর মূলে ধোঁকাবাজী ছিল। একথা কোন মানুষ বলতে পারে না যে কায়েদে আযম আমাদের ধোকা দিয়েছেন। সুতরাং আজকে যুক্ত নির্বাচনের পক্ষে যে সমস্ত যুক্তি দেখান হয় তা অচল (Noise)...

 আজ দ্বিজাতির ভিত্তি যদি অস্বীকার করা হয় তাহলে বুঝতে হবে যে পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক body-র চাপে পড়ে সে আদর্শকে মুসলমান জাতি বিসর্জন দিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা সে আদর্শবাদ কি কারণে জলাঞ্জলী দিতে হবে। এই স্বাতন্ত্র্যবোধই হচ্ছে মুসলমানদের জাতীয়তাবাদের উৎস। আমাদের কোরান ও সুন্নাহ তাই বলে। সেটাকে যদি অস্বীকার করা হয় তাহলে বুঝতে হবে আর একটি কোরান ও হাদিস পাওয়া গিয়াছে এবং মুসলমানদের বিশ্বমানব পরিকল্পনা আদর্শকে পরিত্যাগ করতে হবে। বলাবাহুল্য আমাদের কোরান ও হাদিস এই ভৌগলিক জাতীয়তাবাদ কখনো সমর্থন করে না। আমি আপনার মাধ্যমে বন্দুদের জানাচ্ছি...

 এই রকম নবকল্পিত ভৌগোলিক, সীমাবব্ধ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে জনাব ইকবাল মরহুম যা লিখেছেন আমি তা থেকে দু’একটি কথা উল্লেখ্য করছি- If Turky is left to seek forces of energy in the cretion of new loyal, such a patriotism and nationalism nourishes the strongest force against that culture. তুরস্ক, মিসর ও ইরানের আধুনিক মুসলমানদের দেশ কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদ নূতন জীবন শক্তির কল্পনায় লিপ্ত হয়েছে। এই দেশ কেন্দ্রীক জাতীয়তাবাদ সভ্যতার প্রকৃষ্ট প্রতিবন্ধকরূপ বলে আখ্যায়িত হয়েছে। জনাব স্পীকার সাহেব, জাতীয়তাবাদের নামে যা বলা হয় সেটি অযৌক্তিক বলে জগতের মনীষীগণ একবাক্যে বলেছেন। জনাব ইকবাল মরহুম মুসলমানদের জাতীয়তাবাদের এক নূতন সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। মার্কস বলেছেন, এটা unreasonable, তার মানে কৃষ্টি ও কালচারের বিরুদ্ধে মানব সভ্যতায় এটা একটি অপশক্তি ও অপকৌশল। এই অপকৌশল বর্তমান পৃথিবীকে যুযুৎসু শিবিরে পরিণত করেছে। একটি হচ্ছে রাশিয়ার communism বা সমাজতন্ত্রবাদ আর একটা হচ্ছে ধনতন্ত্রবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ। এই দুটি মতবাদে সংঘর্ষ হচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ যত সংগ্রামই করুন না কেন এ লড়াই